মিডিয়ায় যে জীবন ছিল, সেটা কোনো জীবন ছিল না: ক্লোজআপ তারকা রিংকু

1 day ago 6

শহরে ফিরেছেন রিংকু। ক্লোজআপ তারকা মশিউর রহমান রিংকুর কথা হয়তো অনেকে ভুলে গেছে। হয়তো সুফি ঘরানার গানের কারণে মনে রেখেছেন কেউ কেউ। পাঁচ বছর আগে ছেড়ে যাওয়া প্রিয় ঢাকায় কিছু সময়ের জন্য ফিরেছিলেন এই শিল্পী। যেই ঢাকা তাকে পরিচিতি দিয়েছে, খ্যাতি দিয়েছে, দিয়েছে অগণিত মানুষের ভালোবাসা, সেই শহর ছেড়ে যেত হলো কেন তার? 

গত সোমবার রাতে হঠাৎ বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) দেখা যায় রিংকুকে। একটা গান ও সেটার দৃশ্যধারণ শেষে আবারও তিনি ফিরে যাবেন নওগাঁয়, নিজের বাড়িতে। ঢাকায় হয়তো আসবেন, কিন্তু স্থায়ীভাবে থাকা হবে না রিংকুর।

যাদের মনে নেই তাদের মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে রিংকুর কথা। ২০০৫ সালে রিয়েলিটি শো ক্লোজআপ ওয়ান-এর মাধ্যমে পরিচিতি পান তিনি। বাউল ও সুফি ঘরানার সব বাংলা গান গেয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ের কাছে পৌঁছে যান তরুণ রিংকু। এরপর গেয়েছেন বহু মৌলিক গান। রিংকুর ভাষ্যমতে, সংখ্যায় তা প্রায় ১৬শ! এখনকার কজন শিল্পীর আছে এতগুলো মৌলিক গান? মৌলিক গান ছাড়া শিল্পীকে কি শিল্পী বলা যায়? রিংকুর কাছে এমন প্রশ্ন রাখলে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই। অন্য কারও গান গাক অথবা মৌলিক, তারা সবাই শিল্পী। তবে মৌলিক গান শিল্পীজীবনের চাহিদা। আমি শিল্পী, আমার মৌলিক গান থাকবে। আমি কখনো চিন্তাও করতাম না মৌলিক গানের কথা। কিন্তু আমার অনেক মৌলিক গান হিট।’

এফডিসির এক নম্বর ফ্লোরের মেকআপ রুমে একা একা বসে ছিলেন রিংকু। মাথায় গামছা বাঁধা সেই রিংকুর সঙ্গে এই রিংকুকে মেলানো যায় না। শরীর ভেঙে গেছে। স্ট্রোক করার পরও জীবনটাকে বেঁধে রেখেছেন জীবনের সঙ্গে। তবে গানকে আর আগের মতো ধরে রাখতে পারেননি। কারণ শরীর পারে না। রিংকু বললেন, ‘যে ডাক্তারের কাছেই যাই, সেই ডাক্তারই বলে, সময় লাগবে। কবে পুরোপুরি সুস্থ হবো জানি না।’

চারবার স্ট্রোক করেছেন রিংকু। প্রথমবার ২০১৬ সালে, ইতালিতে শো করার সময়, দ্বিতীয়বার ২০১৮ সালে। সর্বশেষ ২০২০ সালে দুবার স্ট্রোকের পর বাঁ পাশ অবশ হয়ে যায় তার। সেই থেকে গান ছেড়েছেন। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বড় সাওতায় কাটছে তার সময়। অসুস্থ শরীর নিয়েও রিংকু গেয়েছিলেন নতুন গান, ‘জোসনাবিলাস’। কিন্তু সেই ‘ভুল বুঝে চলে যাও, যত খুশি ব্যথা দাও’ গানের রিংকুকে আর পাওয়া যায়নি পরে।

কণ্ঠশিল্পী রিংকু এখন গ্রামের বাসিন্দা। খামার করেছেন। সেই গল্প বলতে গিয়ে জানান, সেখানে অনেক শিক্ষিত মানুষ থাকেন, যাদের সঙ্গে মিশতে ভালো লাগে তার। রিংকুর ভাষায়, ‘গ্রামে থাকি। আমাদের জেলার মধ্যে আমাদের গ্রামটায় শিক্ষিতের হার বেশ। গ্রামে থাকার মতো পরিবেশ আছে। আমার নিজের কৃষি ফার্ম আছে, যেখানে আমার সময় চলে যায়। গ্রামে থাকতে ভালোলাগে। ঢাকায় থাকলে কেউ কাউকে চেনে না। দেখা যায়, পাশাপাশি থাকি, কিন্তু কেউ কাউকে চিনি না। গ্রামে তো সবাই সবাইকে চেনে। তাই গ্রামে থাকতেই আমার ভালো লাগে।’

ঢাকায় শোবিজের বন্ধুদের কি মিস করেন? জাগো নিউজের এমন প্রশ্নে রিংকু বলেন, ‘না...। যদি নিজের কথা চিন্তা করি। তাহলে আর মিস করি না। মিডিয়ায় কেউ কারও বন্ধু না। দিনশেষে নিজের কাছে ফিরতে পেরেছি, এটা ভাবতে খুব ভালো লাগে। নিজের কাছে শান্তি লাগে।’

জানতে ইচ্ছে করে, দুটি জীবন যাপন করেছেন তিনি। একটা সঙ্গীত তারকার জীবন, দ্বিতীয়টি স্ট্রোক করে ফিরে যাওয়া গ্রামের জীবন। দুটি জীবন তাকে কী উপলব্ধি দিয়েছে? রিংকু বলেন, ‘তারকা হিসেবে ওই ওপরতলার জীবনটাও দেখেছি, পরে নিচের তলার জীবনটাও দেখেছি। আমার মতো এত গভীরভাবে হয়তো আর কেউ দেখেনি। আগে মানুষকে গান শোনাতে পারতাম। কীভাবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় সেটা অনেক বন্ধুকে শেখাতাম। এখন এসব পারি না। তবে গ্রামে আমি খুব ভালো আছি। আমার পরিবার খুব ভালো আছে। আমাদের সেখানে কোনো সমস্যা হয় না। দিনশেষে গ্রামের জীবন ভালো। মিডিয়ায় যে জীবন ছিল, সেটা কোনো জীবন ছিল না।’

অনেক গেয়েছেন, ভালোবাসাও অনেক পেয়েছেন। তবু কিছু পাওয়ার জন্য মন কাঁদে এখনো? জানতে চাইলে রিংকু বলেন, ‘জীবনে অনেক অপ্রাপ্তি আছে আমার, কিন্তু গানের বেলায় নাই। আমি শিশু একাডেমি থেকে পাঁচবার গোল্ড মেডেল পেয়েছি। ক্লোজআপ-ওয়ানে ছিলাম, সেখানেও ভালো করেছি। তারপর গান গেয়েছি, তখনও ভালো করেছি। এখন তো অসুস্থ, এটা তো আল্লাহপাকের ইচ্ছে। আমি ২৯টা দেশে কনসার্ট করেছি। সবগুলো কনসার্ট হিট ছিল। তারা এখনো আমাকে চায়। অসুস্থতার কারণে যেতে পারি না। আবার যদি কখনো ভালো করে গাইতে পারি, আবারও গাইবো। আমার ম্যাকসিমাম গান হিট। আমি এখনো অবাক হয়ে যাই, আমার গানগুলো এখনো মানুষ শোনে, বিশেষ করে গরিব মানুষেরা।’

কথা বলতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল শিল্পীর। বেঁধে বেঁধে আসছিল বাক্যগুলো। তাই তাকে প্রশ্ন করা বন্ধ করি। আয়োজকদের কাছ থেকে জেনে নিই রিংকুর ঢাকায় আসার কারণ। তরুণ শিল্পী, সংগীত পরিচালক মিলন জানান, রকিব আলীর কথা ও তার সুরে রিংকুর সঙ্গে তিনি একটি নতুন গান করেছেন। তিনি বলেন, “রিংকু ভাই একটু সুস্থ হয়েছেন। মনে হলো তাকে আবারও গানে ফেরানো যায় কি না। সেই ভাবনা থেকেই তার জন্য নতুন গান করেছি। শিরোনাম ‘মন দিয়া কেউ ভালোবাসে না’। গানটার মিউজিক ভিডিও হবে, সেখানে রিংকু ভাইকে দেখা যাবে। আর গানটা দেখা যাবে ইউটিউবে, রকেট বাংলা মিউজিক চ্যানেলে।” 

এমআই/আরএমডি

 

Read Entire Article