মিয়ানমার সীমান্তে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ফাটল বাড়ির দেয়াল
মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশের ওপারে থেমে থেমে বিস্ফোরণ বিকট শব্দে এপারের ঘরবাড়িগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। মুহুর্মুহু গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ ও কালো ধোঁয়া ভেসে আসছে টেকনাফের নাইথ্যাং পাড়া ও উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে।
বুধবার (২০ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দিনেও থেমে থেমে মর্টারশেল ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ে মর্টার শেল ও যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া গোলার বিস্ফোরণে আবারও কাঁপছে টেকনাফ সীমান্ত জনপদ। বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত সীমান্তের বাসিন্দারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এতে সীমান্তের একাধিক বাড়িঘরে ফাটল ধরেছে। প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে। থরথর করে কাঁপছে টেকনাফ সীমান্ত। বারবার বিস্ফোরণের কারণে লবণ চাষি, নাফ নদী ও সাগরের জেলে এবং মাছ ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল লোকজন চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটের বাসিন্দা ইমান হোসেন জানান, রাখাইন রাজ্যের যুদ্ধে আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না। মর্টার শেল ও যুদ্ধ বিমানের গোলার বিকট শব্দ প্রায়ই শুনতে পাই।
টেকনাফ পৌরসভা জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা মো. ইসমাইল জানান, মধ্যরাতে বিস্ফোরণের শব্দ সবচেয়ে বেশি। সীমান্তের কাছে থাকায় মনে হচ্ছে যে কোনো সময় বাড়িতে মর্টার শেল পড়তে পারে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ আলী কালবেলাকে বলেন, রাত থেকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। তবে তাদের আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। টানা নয় মাস ধরে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এর মধ্যে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের আশপাশের একাধিক বিজিপি চৌকি এবং সেনা ক্যাম্প দখল করেছে।
এদিকে মর্টার শেল ও গুলির বিকট শব্দে কাঁপছে উখিয়ার পালংখালী সীমান্তও। বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত থেমে থেমে ভেসে আসে বিকট শব্দ। এতে ঘুমধুম ও পালংখালী ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।
জানা যায়, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের সঙ্গে চলছে সংঘর্ষ। ঘুমধুম ও উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের ওপারে রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামগুলোতে সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষের প্রভাব পড়ছে ঘুমধুম ও পালংখালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে।
পালংখালী সীমান্ত এলাকার গণমাধ্যমকর্মী রফিক মাহমুদ বলেন, থেমে থেমে ভারি গোলার শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে। যার কারণে সীমান্ত এলাকায় অযথা না যাওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ঘুমধুম এলাকার হামিদুল হক বলেন, মিয়ানমার থেকে ৫৬ জন তংচগ্যা ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের লোকজন প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পার হয়ে উখিয়া হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে আশ্রয় নেওয়ার একদিনের মাথায় বহুদিন পর আবার গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী লোকজন। এতে সীমান্তবর্তী বসবাসকারী লোকজন ভয়ের মধ্যে আছেন।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, কিছুদিন বন্ধ থাকার পর পালংখালী সীমান্তের ওপারে ভারি গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আমরা সীমান্তবাসী দুশ্চিন্তায় আছি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আরিফ উল্লাহ নিজামী কালবেলাকে বলেন, রাখাইন রাজ্যের বিস্ফোরণের বিকট শব্দ টেকনাফ সীমান্তেও শোনা গেছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কোস্ট গার্ড ও বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সীমান্তবাসীর খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
টেকনাফ ২-বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় বিকট শব্দ ও গোলাগুলির খবর পেয়েছি। সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।