ললিত পাতিদারের বয়স মাত্র ১৮। স্বাভাবিক অন্যান্য তরুণের মতো তার জীবন একেবারেই নয়। সবার থেকে তাকে আলাদা করেছে তার মুখের বড় বড় লোমগুলো। ললিতের মুখের প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে রয়েছে ২০১.৭২টি বড় বড় লোম বা চুল। তার মুখের ৯৫ শতাংশেরও বেশি অংশ বড় লোমে ঢাকা।
বিশ্বে সবচেয়ে লোমশ মুখের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠলো ভারতের মধ্যপ্রদেশের নন্দলেতা গ্রামের বছর আঠারোর এই তরুণের। মূলত একটি বিরল রোগের কারণে তার এই অবস্থা। যা হাইপারট্রিকোসিস নামে পরিচিত।
এই বিরল রোগটিকে ‘ওয়েরেউলফ সিনড্রোম’ বলেও ডাকা হয়। এই অবস্থার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে অতিরিক্ত বড় বড় লোম গজাতে থাকে। জিডব্লিউআর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে, সারা বিশ্বে শুধুমাত্র হাইপারট্রিকোসিসের ৫০টি ঘটনা নথিবদ্ধ করা হয়েছে।
ছোট থেকেই ললিত নিজের এই অবস্থা সম্পর্কে অবগত। নিউ ইয়র্ক পোস্টের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন যে, প্রথম দিকে অবশ্য তার বিষয়ে তার বাবা-মা অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেননি। ললিতের কথায়, আমার মা-বাবা দাবি করেছিলেন যে, জন্মের সময় চিকিৎসক নাকি আমায় লোম পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি নিজের ৬-৭ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত কোনো পার্থক্য বুঝতে পারিনি। আসলে সেই সময় আমার দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে বড় বড় লোম বের হতে শুরু করে। যেটা অন্যদের মতো ছিল না।
বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ললিত একাধিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন নিজের চেহারার কারণে। অপরিচিত মানুষেরা তার দিকে চেয়ে থাকতেন। এমনকি তার সম্পর্কে উল্টোপাল্টা মন্তব্যও করা হত। জিডব্লিউআর-এর কাছে তিনি বলেন যে, মানুষ তাকে ভয় পেতেন। কিন্তু তারা যখন ললিতের সম্পর্কে জানতে শুরু করেন এবং কথা বলতে শুরু করেন, তখন তারা স্বাভাবিক হতে শুরু করে ললিতের সঙ্গে। সবাই বুঝতে পারেন, ললিত তাদের থেকে আলাদা না। বাহ্যিক চেহারাতেই তাদের থেকে আলাদা, কিন্তু ভিতর থেকে অন্যদের মতোই তিনি।
ললিত নিজেও নিজেকে মেনে নিতে শিখেছেন। নিজেকে গুটিয়ে না নিয়ে মেলে ধরেছেন সমাজের কাছে। সবার কাছেকাছি যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় এখন সোশ্যাল মিডিয়া। সেই পথই বেছে নিয়েছেন ললিত। বর্তমানে তার একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে, যেখানে ভিউয়ারদের সঙ্গে নিজের দৈনন্দিন জীবন ভাগ করে নেন তিনি।
সম্প্রতি ইতালির মিলানে বেড়াতে গিয়েছিলেন ললিত। একটি টেলিভিশন শোয়েও যোগ দিয়েছিলেন। তার মুখের বড় বড় লোম মেপে নিশ্চিত করা হয় যে, তিনিই রেকর্ডের যোগ্য। একজন ট্রিকোলজিস্ট তার মুখের লোমের ঘনত্ব পরিমাপ করেছেন। রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার খবর জেনেই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন ললিত।
সূত্র: গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস
কেএসকে/জিকেএস