বুধবার বেলা ১১টা ৫ মিনিট। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ান বাজার মোড়ে তখন যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ। সিগন্যালে গাড়ির চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা পুলিশ ও ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা ছাত্র সদস্যদের। হঠাৎই সেখানে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা মূল সড়কে উঠে যায়। রিকশাটি থামাতে সংকেত দেন ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা ছাত্র সদস্যরা।
কিন্তু থামার সংকেত পেয়ে চালক রিকশার গতি আরও বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এমন সময় চট করে সেই রিকশায় উঠে পড়েন একজন ছাত্র সদস্য। তখন রিকশাটি ছেড়ে দিতে তৎক্ষণাৎ চালক সেই ছাত্রকে ৫০০ টাকা দিতে চান। একই সময়ে ফুটপাত দিয়ে আরেকজন ছাত্র সদস্য দৌড়ে রিকশাটির দিকে যেতে থাকেন। তবুও থামছিল না রিকশাটি।
একপর্যায়ে হোটেল সোনারগাঁও পার হওয়ার পর অনেক গাড়ির ভিড়ে রিকশার গতি কমাতে বাধ্য হন চালক। এরপর আরও দুজন ছাত্র সদস্য ছুটে যান রিকশার কাছে। রিকশাচালক তখন রিকশাটি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করতে থাকেন। ছাত্র সদস্যরা তাকে বলেন, ‘আপনি ৫০০ টাকা দিতে চাইলেন কেন? আমরা সড়কে শৃঙ্খলার কাজ করছি, কোনো টাকার জন্য নয়।’
ঘটনার পুরোটা সময় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক মোটরসাইকেলে মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। এ প্রতিবেদকের সামনে ঘটনাটি ঘটায় তিনি মোবাইল ফোনে পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন।
অভিযুক্ত রিকশাচালকের দাবি, তিনি গতকাল (মঙ্গলবার) মূল সড়কে উঠে ১০০০ টাকা জরিমানা গুনেছেন। আজ একজন যাত্রীকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার সময় মূল সড়কে উঠে পড়ছিলেন। রিকশাচালক বলেন, ‘আমার দোষ নেই। আমাকে ছেড়ে দেন ভাই।’
ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা ছাত্র সদস্যরা বলেন, আপনাকে আরও আগেই সংকেত দেওয়া হয়েছে রিকশা থামানোর জন্য। কিন্তু আপনি রিকশা দ্রুতগতিতে চালিয়ে পালিয়ে যেতেন চেয়েছিলেন। অবশেষে ধরাও পড়লেন। আবার ৫০০ টাকাও দিতে চেয়েছেন। আপনার রিকশা ধরলে আপনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে পারতেন, কিন্তু আপনি তা করেননি।
এসময় সড়কে উৎসুক জনতার জটলা সৃষ্টি হলে কারওয়ান বাজার মোড়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশের কাছে রিকশাসহ চালককে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডিএমপির সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০টি রিকশা ডাম্পিং করা হচ্ছে, ব্যাটারি জব্দ করা হচ্ছে, তার কেটে দেওয়া হচ্ছে। মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা যেন না উঠতে পারে সে কারণে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের পাশাপাশি এক হাজার ছাত্র সদস্যও কাজ করছে।
যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মূল সড়কে রিকশা নিয়ে যাত্রীদের না ওঠার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অন্য যানবাহনের পাশাপাশি মূল সড়কে রিকশা চলাচল করলে যানজটসহ দুর্ঘটনাও ঘটে।
টিটি/এমকেআর/এমএস