মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ডলার ক্রয় বড় বাধা বলে মনে করছে আইএমএফ

6 hours ago 8

দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ডলার ক্রয়কে বড় বাধা হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি জানতে চেয়েছে—যখন দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চপর্যায়ে, তখন কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমানে ডলার ক্রয় কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। আইএমএফ আরও জানতে চেয়েছে, রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠনসহ বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন ও প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা কেন অব্যাহত রাখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিউ নেতৃত্ব দেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ড. এজাজুল ইসলাম এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

বৈঠকে আইএমএফ জানতে চায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি রেট (নীতি সুদহার) কবে কমানো হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে তখনই পলিসি রেট কমানো হবে। বর্তমানে পলিসি রেট ১০ শতাংশ, যেখানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছে ১৩-১৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা আইএমএফকে জানিয়েছি—মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে। জানুয়ারিতে ধান উঠলে খাদ্যপণ্যের দাম কমবে, তখন পলিসি রেটে কিছুটা সমন্বয় আনা হতে পারে।’

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক গত কয়েক মাসে অকশন পদ্ধতিতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি কিনেছে। আইএমএফ প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে জানতে চায়—একদিকে পলিসি রেট উঁচু রাখা হচ্ছে, অন্যদিকে ডলার কিনে বাজারে টাকা ছাড়লে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ে না কি? কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যাংকগুলোতে অব্যবহৃত ডলার ছিল। ডলারের দর হঠাৎ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ওই সময় ডলার কেনা হয়, তবে এখন আর কেনা হচ্ছে না।

বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আগের সরকারের সময়ে অনেক তথ্য গোপন রাখা হয়েছিল, যা এখন প্রকাশ করা হয়েছে। 

সূত্র জানায়, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত অনুযায়ী সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। কিন্তু গত জুন শেষে দেশের মোট খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা, যা এক বছরে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বৃদ্ধি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি হার ৪০ শতাংশের বেশি, আর বেসরকারি খাতেও তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

আইএমএফ প্রতিনিধিদল মুদ্রানীতির কাঠামো, তারল্য সংকট, পুনর্মূলধন, প্রভিশন ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। এ ছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই বিনিয়োগ ও সবুজ অর্থনীতিতে বাংলাদেশের পদক্ষেপ সম্পর্কেও জানতে চায় সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ‘আইএমএফের পঞ্চম রিভিউ মিশন নিয়মিতভাবে তথ্য সংগ্রহ করছে। তারা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে—মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার, তারল্য সহায়তা, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা ও খেলাপি ঋণ কমানোয় গৃহীত পদক্ষেপে।’

আইএমএফ প্রতিনিধিদল জানায়, বর্তমান সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও, দীর্ঘ সময় অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। এজন্য তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আগামী ১২ মাসের সামষ্টিক অর্থনৈতিক রূপরেখা জানতে চেয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খেলাপি ঋণসহ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ৬ ব্যাংকের সাম্প্রতিক চিত্র, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট, ব্যাংকগুলোকে দেওয়া পুনর্মূলধন, বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের চিত্র এবং ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি এবং তা কমানোর পদক্ষেপ বিষয়ে জানতে চায় আইএএমএফের প্রতিনিদিদল। 

এ ছাড়া জলবায়ু, টেকসই বিনিয়োগে এবং সবুজ অর্থনীতিতে কী ধরনের পদক্ষেপ রয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন সফররত দাতা সংস্থাটির সদস্যরা।

Read Entire Article