মৃত ব্যক্তির চোখে কি সুরমা লাগানো যাবে?

2 months ago 31

মৃতের শরীরে কোনো ধরনের সাজসজ্জা করা নিষিদ্ধ। সুরমা যেহেতু সাজসজ্জার অন্তর্ভুক্ত, তাই মৃত ব্যক্তির চোখে সুরমা লাগানো নিষিদ্ধ। একইভাবে মৃত ব্যক্তির চুল আঁচড়ানো বা চুলে সিঁথি করা নিষিদ্ধ। প্রখ্যাত তাবেঈ ইবরাহিম নাখঈ (রহ.) বলেন, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) এক মৃতের চুল আঁচড়ে দিতে দেখে বললেন, তোমরা মৃতের চুল কেন আঁচড়াচ্ছ? (কিতাবুল আসার: ১/২৪২)

মৃত ব্যক্তির চুল, নখ, দাড়ি, গোঁফ ও অন্যান্য অবাঞ্চিত লোম ছাটা বা শেভ করাও নিষিদ্ধ। যদি এ সব লোম অস্বাভাবিক বড়ও হয়, তবুও মৃত্যুর পর তা কাটা যাবে না। অসুস্থ বা মুমুর্ষু ব্যক্তির নখ ও অবাঞ্চিত লোম বড় হলে মৃত্যুর আগেই তা ছেটে দেওয়া উচিত।

হাসান বসরি (রহ.) ও ইবনে সিরীন (রহ.) বলেছেন, মৃতের চুল ও নখ কাটা যাবে না। (আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকি: ৬৬৩৬)

আইয়ুব সখতিয়ানি (রহ.) বলেন, মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন (রহ.) মৃতব্যক্তির নাভির নিচের পশম ও নখ ইত্যাদি কাটা অপছন্দ করতেন এবং তিনি বলতেন, তার পরিবারের উচিত অসুস্থ অবস্থায়ই এগুলো কেটে দেওয়া। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১১০৫৪)

কেউ ভুলে নখ বা চুল এগুলোর কোনোটি কেটে ফেললে কর্তিত চুল, নখগুলো মায়্যিতের কাফনের ভিতর দিয়ে দিতে হবে। কারণ, মৃতকে তার দেহের সব অংশসহই দাফন করা সুন্নত।

প্রসঙ্গত, কোনো মুসলমানের মৃত্যুর পর তাকে গোসল করানো, কাফন পরানো ও জানাজার নামাজ পড়ে তাকে কবরস্থ করা মুসলমানদের ওপর ফরজে কেফায়া। মৃতের ওয়ারিস, অভিভাবক ও তার আত্মীয়-স্বজন থাকলে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব প্রথমত তাদের ওপর বর্তায়। যদি মৃতের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করার কেউ না থাকে, তাহলে তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা মুসলমানদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। কেউ এই দায়িত্ব পালন না করলে সবাই গুনাহগার হবে।

মৃতের যদি সম্পদ থাকে তাহলে তার সম্পদ থেকেই তার কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করার মতো সম্পদ মৃতের না থাকে, তবে তাকে কাফন দেওয়ার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে জীবিত অবস্থায় তার দেখাশোনার দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল। আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কেউ ব্যবস্থা করতে না পারলে তার কাফনের ব্যবস্থা করা মুসলমানদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য যেমন ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ও কাফন পরানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মৃত ব্যক্তিকে গোসল করায় এবং তার ত্রুটি গোপন করে, আল্লাহ সে ব্যক্তির গোনাহ গোপন করে দেন। আর যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরায় আল্লাহ তাকে জান্নাতি রেশমের পোশাক পরিধান করাবেন। (মু’জামুল কাবির লিত-তাবরানি: ৮০০৪)

ওএফএফ/জিকেএস

Read Entire Article