ফরিদপুরের নগরকান্দায় ‘মেজর আতঙ্কের’ ভয় দেখিয়ে এক উপপরিদর্শকের (এসআই) চাঞ্চল্যকর প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, থানায় আটক এক যুবকের পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক(এসআই) রবিউল ইসলাম। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের শশা গ্রামের দরিদ্র কৃষক ইকতার শেখের পরিবার। ভুক্তভোগী যুবকের নাম ইমদাদুল শেখ (২৭)।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ইমদাদুল তার প্রতিবেশী জিসান মাতুব্বরের কাছে ২ হাজার ৫০০ টাকা পেতেন। গত শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) জিসান জানান, তালমা মোড়ের একটি বিকাশ দোকানে গেলে সেখানে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে, এর মধ্যে নিজের পাওনা রেখে বাকিটা তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটে বিপত্তি।
বিকাশ দোকানদার মিন্টু খন্দকার বলেন, একজন নিজেকে ‘মেজর’ পরিচয় দিয়ে ফোন করে বলেন, ‘যে ছেলেটি টাকা নিতে আসছে, তাকে আটকান, না হলে বিপদ হবে। আমি ভয় পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় থানায় খবর দিই। পরে পুলিশ এসে ছেলেটিকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ইমদাদুলকে থানায় নিয়ে যান এসআই রবিউল ইসলাম।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কোনো অপরাধের প্রমাণ না মেলায় তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হলেও, এরপরই শুরু হয় টাকার দাবির নাটক।

ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, থানার গোলঘরে এসআই রবিউল ইমদাদুলের মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন জিম্মি রেখে বলেন, ‘বিষয়টা এখন আমার হাতে নেই, মেজর আসিফ নামের একজন এটি দেখছেন।’
আরও পড়ুন-
নোয়াখালীতে টুপি নিয়ে দ্বন্দ্ব, ঘুমন্ত সহপাঠীকে গলা কেটে হত্যা
পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে দরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ
সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস যেন ধ্বংসস্তূপ, পরিবেশ থমথমে
এরপর রবিউল নিজেই তার ফোনে ইমদাদুলের পরিবারের সঙ্গে ‘মেজর আসিফ’র কথা বলিয়ে দেন। ওই ব্যক্তি ছেলেকে ছাড়ানোর জন্য ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন। রবিউল দুইটি বিকাশ নম্বর দেন এবং বলেন, ‘টাকা পাঠাতে দেরি করলে মামলা হবে, এখনই পাঠান।’
পরিবার আতঙ্কে পড়ে তড়িঘড়ি করে দুটি বিকাশ নম্বরে ৬০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়। টাকা পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর ইমদাদুল ও তার মোটরসাইকেল ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে মোবাইল ফোনটি ফেরত পাননি।
ভুক্তভোগী ইমদাদুল শেখ বলেন, ‘আমার প্রতিবেশী জিসান আমার কাছ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা ধার নিয়েছিল। পাওনা চাইলে সে বলে, তালমা মোড়ে বিকাশ দোকানে যেতে, সেখানে ২০ হাজার টাকা পাঠানো আছে। দোকানে যেতেই তারা আমাকে জাল টাকার ব্যবসায়ী বলে আটকে রেখে মারধর করে এবং পরে পুলিশে দেয়।’
ইমদাদুলের মা শিল্পী বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে জিসান ফাঁদে ফেলেছে। থানায় নিয়ে গিয়ে রবিউল স্যার নানা মামলা দেওয়ার ভয় দেখান। আমরা ভয়ে বিকাশে টাকা পাঠিয়েছি। এখন তারা মুখ না খোলার হুমকি দিচ্ছে।’
ভুক্তভোগীর বাবা ইকতার শেখ জানান, ‘এসআই রবিউলের ভয়েই আমি নগরকান্দা বাজারের বাবুর বিকাশের দোকান থেকে দুইটি নম্বরে ৬০ হাজার টাকা পাঠিয়েছি। টাকা পাঠানো শেষ হতেই ছেলে আর মোটরসাইকেল ছাড়ে, কিন্তু ফোন ফেরত দেয়নি।’
অভিযুক্ত প্রতিবেশী জিসান মাতুব্বরের বাড়িতে গিয়ে কিংবা মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘তালমা মোড়ের বিকাশ ব্যবসায়ী ফোনে জানায়, তারা একজন জাল টাকার ব্যবসায়ীকে ধরেছে। আমি গিয়ে থানায় মোটরসাইকেল, মোবাইলসহ ইমদাদুলকে তাকে নিয়ে আসি। পরে যারা বিষয়টি জানান, তারা আর থানায় আসেনি। পরে কিছু না পেয়ে পরিবারের জিম্মায় ইমদাদুলকে ছেড়ে দেই। মেজর পরিচয়ে টাকার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। টাকা নেওয়ার বিষয়টি এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়।’
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ‘জাল টাকার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছিল, কিন্তু সত্যতা না পাওয়ায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকার লেনদেনের বিষয়ে এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এন কে বি নয়ন/এফএ/এমএস

3 hours ago
5









English (US) ·