১১ বছরের শৈতী রানী সড়ক দুর্ঘটনায় যেন জীবন হারিয়ে ফেলেছে। যে সময়টায় বিদ্যালয়ের অন্যান্য সহপাঠীরা খেলাধুলায় মেতে রয়েছে, সে সময় চুপচাপ শুয়ে আছে ঘরের মধ্যে। কাতরাচ্ছে যন্ত্রণায়। বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক মুহূর্ত লড়াই করতে হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির এই শিক্ষার্থীকে। ভাঙা ঘাড় আর যন্ত্রণা নিয়ে দুঃসহ জীবন পার করছে মা-বাবার আদরের ছোট্ট মেয়েটি।
ওদিকে ছোটাছুটি করা মেয়েটি চুপচাপ করে বসে আছে ঘরের এক কোণে। অটোরিকশা দুর্ঘটনায় ঘাড় ভেঙে গেছে তার। উন্নত চিকিৎসা না হলে চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে যাবে এই ক্ষুদে শিক্ষার্থী।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার গুলিসাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শৈতী। ছোটবেলা থেকে লেখাপড়া, ছবি আঁকা, ফুটবল খেলা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে পারদর্শী সে। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ সে নিজে কিছুই করতে পারছে না।
আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় অটোরিকশার মোটরে ওড়না পেঁচিয়ে স্পাইনাল কর্ড ভেড়ে পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছে। শৈতীর বাবা একজন ছোট চাকরিজীবী। মাসে মাত্র কয়েক হাজার টাকা আয়। সেই টাকায় চলে সংসার, চলে বাজার ও স্কুলের খরচ। সেই সামান্য আয়ের মধ্যেই করছেন মেয়ের চিকিৎসা। তবে স্পাইনাল কর্ড ছিঁড়ে যাওয়ায় ঘাড় থেকে পুরো শরীরে কোনো অনুভূতি নেই। হাত-পা নাড়াতে পারছে না শৈতী। এজন্য দেশের বাইরে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। সঠিকভাবে চিকিৎসা করাতে না পারলে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে এই শিক্ষার্থীকে।
শৈতীর রানীর বাবা শংকর কুমার হালদার বলেন, আমার বড় মেয়ে শৈতী, অটোতে ওড়না পেঁচিয়ে ঘাড় ভেঙে যায়। ঢাকায় দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি নিয়ে আসি। ওর ঘাড়ের অপারেশন করিয়েছি। এখন মাথা ঠিকমতো কাজ করলেও ঘাড়ের নিচে হাত-পা, শরীর কোনো কিছুই কাজ করে না। টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছি না। যদি কেউ সহযোগিতা করতো তাহলে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারতাম।
শৈতী রানীর মা মনীষা রানী বলেন, ছোটবেলা থেকে গান, বক্তৃতা, ফুটবল খেলা সবকিছুতেই পারদর্শী ছিল শৈতী। আমি কোনো কিছু বললে ও সেটা মনোযোগ দিয়ে শুনতো। লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী ছিল। সেই মেয়ে আমার এখন হাত-পা কিছুই নাড়াতে পারে না। আমরা চাই ওর উন্নত চিকিৎসা হোক। আমার মেয়ে আগের মতো লেখাপড়া করুক।
শৈতীর গৃহশিক্ষক বলেন, সে মেধাবি শিক্ষার্থী। লেখাপড়াসহ অন্যান্য বিষয়গুলোতেও বেশ পারদর্শী। অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আজকের এই অবস্থা। ওর বাবা সামান্য বেতনে চাকরি করে। তা থেকেই ওর চিকিৎসা করানো হয়েছে। তবে উন্নত চিকিৎসা করার দরকার, তাহলে সে সুস্থ হতে পারে। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের শৈতীর চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসা উচিত।
মঠাবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল কাইয়ূম বলেন, দুর্ঘটনাটি আমার এড়িয়ার মধ্যে ঘটেনি। তার দুর্ঘটনার সংবাদ আমি আগে পাইনি। তবুও তারা আমার কাছে এলে আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবো।
মো. তরিকুল ইসলাম/জেডএইচ/জিকেএস