মেয়ে-নাতিনিদের নিয়ে ঈদ করা হলো না কুলছুমার

2 days ago 12

ময়মনসিংহ শহর থেকে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশায় গ্রামের বাড়ি গৌরীপুরে যাচ্ছিলেন ৯০ বছর বয়সী কুলছুমা বেগম। একসঙ্গে গ্রামে ঈদ করবে, সঙ্গে ছিল মেয়ে-জামাই আর ৪ নাতনি। পথে গৌরীপুর উপজেলার চন্দ্রপুর ও সদর উপজেলার সাহেব কাচারীর মধ‍্যবর্তী ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে হঠাৎ পেছন থেকে একটি দ্রুতগতির বাস যাত্রীবাহী ওই অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে মা-মেয়ে ও দুই নাতনিসহ এক পরিবারের ৪ জন নিহত হয়। 

নিহতরা হলেন- দুর্বাচর গ্রামের প্রয়াত ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী কুলছুমা বেগম (৯৫), তার মেয়ে স্ত্রী দিলরুবা (৪০), নাতী দিলরুবা (৭) ও রীতি (১৪)। নিহতদের মধ্যে প্রীতি প্রথম শ্রেণিতে ও রীতি অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

নিহত দিলরুবা খাতুনের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার বোন, ভগ্নিপতি ও ভাগনিদের নিয়ে একসঙ্গে ঈদ করতে চেয়েছিলেন। তিনি নেত্রকোনার কলমাকান্দায় একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। সেখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারি ইউনিয়নের দুর্বারচর গ্রামে বেড়াতে আসেন। সে অনুযায়ী সবাইকে দাওয়াত দেন। দাওয়াত রক্ষাও করা হয়। কিন্তু ঈদ আর করা হলো না। ঈদের কেনাকাটা করে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
 
তিনি বলেন, ভোর পৌনে ৬টার দিকে দুটি অটোরিকশার একটিতে আমি, আমার স্ত্রী ও এক সন্তান ছিল। অন্যটিতে আমার মা (কুলসুমা), মানিক, দিলরুবা, রীতি, প্রীতি, মাহি ও শ্যামলী ছিল। সাড়ে ৬টার দিকে গৌরীপুরের বৈশাখী মোড় পর্যন্ত আসতেই পেছন থেকে দ্রুতগতির একটি বাস অটোরিকশায় চাপা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে গেলে আমার মা, বোন ও ভাগ্নিসহ সতজন গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আমার চোখের সামনেই নিমিষেই চারটি তরতাজা প্রাণ শেষ হয়ে গেল। বাসচালককে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানাই।

অটোতে থাকা আহত শ‍্যামলী আক্তার বলেন, দাদিকে নিয়ে আমরা সাত জন অটোরিকসায় বাড়িতে আসছিলাম। পথে হঠাৎ বাস আমাদের পেছন থেকে ধাক্কা দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এখন আমি কাকে নিয়ে ঈদ করব, বলেই আহাজারি শুরু করেন শ‍্যামলী। 

স্থানীয়বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম শোক প্রকাশ করে বলেন, এক সঙ্গে মা, মেয়ে ও দুই নাতনির মৃত্যুর ঘটনাটি মর্মান্তিক। এই ঘটনায় পুরো গ্রামজুড়ে শোকাবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। 

এদিকে সরেজমিনে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এক সঙ্গে চার স্বজন হারানোর বেদনায় বাকরুদ্ধ প্রতিবেশি ও আত্মীয় স্বজনরা। সবাই যেন নিরব নিস্তব্ধ। তাদের স্বজন হারানোর বেদনায় সহমর্মিতা জানাতে ছুটে এসেছেন প্রতিবেশি ও গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। বাড়ি পূর্বদিকে বৈঠক আঙিনায় একসঙ্গে পাশাপাশি ৪টি কবর খুড়ছেন বেশ কতক লোক। উঠানে পাশাপাশি রাখা হয়েছে লাশ রাখার ৪ খাটিয়া। আর বাড়ির ভেতর ঘরে বসে স্বজন হারানোর বেদনায় বিলাপ করছেন নারীরা। এতে ভারি হয়ে উঠেছে বাড়িটির পরিবেশ। 

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম কালবেলাকে বলেন, ময়মনসিংহ থেকে গৌরীপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিল পরিবারটি। দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যরা চিকিৎসাধীন রয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আহত অবস্থায় মাহি আক্তার ও শ্যামলী নামের দুইজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

Read Entire Article