মেনালিসার চিত্রকর্ম দেখেননি কিংবা নাম শুনেননি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। অন্তত রেপ্লিকা ছবি হলেও এটি দেখেছেন। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যজনক একটি ছবি হচ্ছে মোনালিসার ছবি।
রেনেসাঁ যুগের চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা এই ছবিটি হৃদয় কেড়েছে কোটি কোটি মানুষের। ৫০০ বছরের পুরোনো এই ছবিটকেই বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত চিত্রকর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
বেশ কিছু ছবি এঁকেছেন ভিঞ্চি। কিন্তু এই চিত্রকর্মটি এমন একটি শিল্প যা পুরো পৃথিবীতে বিখ্যাত। এর শিল্পগুণ অন্যান্য চিত্রশিল্প থেকে অন্যরকম এবং বেশ পরিচিত।
তবে কৌতূহলী মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে, এই ছবিটি এত বিখ্যাত হওয়ার কারণ কী? বেশ কিছু গবেষণা থেকে উঠে এসেছে এই চিত্রশিল্প নিয়ে নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন রয়েছে।
জানা যায়, মোনালিসার ছবিটি আঁকা হয়েছিল একজন সিল্ক ব্যবসায়ীর অনুরোধে। ভিঞ্চির লেখা তার বইয়ে জানান, সিল্ক ব্যবসায়ী ফ্রান্সেসকো ডেল গিওকোন্ডো লিওনার্দোকে তার স্ত্রী লিসা গেরারদিনির প্রোট্রেট আঁকতে অনুরোধ করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইতালিতে যে কোনো নারীকে ‘মোনা’ বলে সম্বোধন করা হতো। আর ছবিতে থাকা নারীর নাম লিসা। শব্দ দু'টো মিলিয়েই ছবিটির নাম দেওয়া হয় ‘মোনালিসা’।
ছবিটির সঙ্গে লিওনার্দোর চেহারার অনেক বৈশিষ্ট্যের মিল থাকায় অনেকেই মনে করেন এটি আসলে শিল্পীর নিজেরই ছবি। আবার অনেকের ধারণা, এটি লিওনার্দোর মা কিংবা তার বান্ধবীর পোট্রেট। বিখ্যাত জাদুঘর ল্যুভরে সেই ১৮০৪ সাল থেকেই চিত্রকর্মটি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই চিত্রকর্মটি বিক্রি করা বেশ জটিল। কেননা আইন অনুসারে এই ছবিটি ফরাসি নাগরিকদের, যা ফলে এর দাম নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব। তবে ১৯৬২ সালে এর মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ কোটি ডলার যার বাজারমূল্য ৮৩ কোটি ডলারের বেশি।
এই চিত্রকর্মটির বেশকিছু রহস্য এখনো রয়ে গেছে। যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হলো মোনালিসার হাসি। লিওনার্দো এমনভাবে রঙের ব্যবহার করেছেন যাতে করে ছবির নারীর হাসিতে একধরনের রহস্যময়তা ফুটে উঠেছে। সাধারণভাবে তাকালে মনে হয় চিত্রকর্মের নারীটি হাসছেন। কিন্তু আবার হাসির দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকলে দেখা যাবে সেই হাসি ক্রমেই মিলিয়ে যাচ্ছে।
আলোচিত এই চিত্রকর্মটি এখনো হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় থাকলেও পপলার কাঠের প্যানেলে ছবিটি আঁকার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার ফলে এর কিছু অংশে ফাটল ধরেছে। কিন্তু তারপরও, সারা বিশ্বে যুগের পর যুগ এই চিত্রকর্মটি মানুষের হৃদয়ে থেকে যাবে।