যশোর মেডিকেল কলেজে সব রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা

2 months ago 10

যশোর মেডিকেল কলেজে (যমেক) সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সেবামূলক সংগঠন সন্ধানীসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও বন্ধে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

সোমবার (৩০ জুন) কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার আবু হাসনাত মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

যমেকের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি, দেশে ক্ষমতার পট-পরিবর্তনের পর যেভাবে ক্যাম্পাসে ‘রাজনৈতিক পল্টিবাজি’ শুরু হয়েছে তাতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। সেইসঙ্গে ফ্যাসিস্ট উত্তর ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু রাজনীতির যে ধারা তৈরি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাও নস্যাৎ হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর যশোর মেডিকেল কলেজে রাজনৈতিক পালাবদল শুরু হয়। এর আগে এ ক্যাম্পাসে এককভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ। তাদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকরা।
 
সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীরা জানান, হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক ছাড়া বিগত হাসিনা সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিলেন যশোর মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরা।  

তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র স্লোগান দিয়ে প্রকাশ্যে সরকারি দলের ‘লোক’ বনে গিয়েছিলেন। এসব শিক্ষক যশোর মেডিকেল কলেজকে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যান। যমেকের এমন কোনো কাজ ছিল না যা তাদের মতামতের বাইরে পরিচালিত হয়েছে।  

একইভাবে পুরো ক্যাম্পাসে একাধিপত্য কায়েম করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। রাজনীতির নামে শিক্ষকদের দলাদলিতে ভূমিকা রাখা, টেন্ডার বাণিজ্য, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যেও ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল একচেটিয়া। ক্যাম্পাসে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব রাখতে দেয়নি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তাদের নানা অপকর্মের কারণে বারবার মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছে যশোর মেডিকেল কলেজ।  

কথিত স্বাধীনতাপন্থীদের দৌরাত্মে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক মনোভাবাপন্নরা চরম অন্যায়ের শিকার হলেও প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না। সামান্য মতের মিল না হলেই বিএনপি, জামায়াতপন্থি অনেক শিক্ষক (চিকিৎসক) হয়রানিমূলক বদলির শিকার হয়েছেন স্বাচিপ আর ছাত্রলীগ নেতাদের নগ্ন হস্তক্ষেপে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর মেডিকেল কলেজের অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর পুরো পাল্টে গেছে এখানকার দৃশ্যপট। যারা এতদিন আওয়ামী লীগের সামনের সারিতে বসার জন্য ‘কামড়াকামড়ি’ করতেন তারাই এখন বিএনপিপন্থি ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব)’ পতাকাতলে সমবেত হওয়ার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অনেকে ভোল পাল্টে ভিড় করছেন ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে।  

মূলত ফ্যাসিস্টের দোসর শিক্ষক ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের ক্ষমতার প্রভাব ও বলয় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার বলি হতে যাচ্ছে যশোর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস। এদের ইন্ধনেই মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সন্ধানী’র পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা এখন পৃথক কর্মসূচিও পালন করছে। এসব ঘিরে শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে চরম উত্তেজনা শুরু হয়েছে। বুঝে বা না বুঝে ড্যাবের অনেক নেতাই ‘এই পালে হাওয়া দিচ্ছেন’ বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, দ্বন্দ্বের বলি হচ্ছেন তারা। ফলে পরিস্থিতি শান্ত করতে সন্ধানীর সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটাকে তারা স্বাগত জানান।

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার আবু হাসনাত মো. আহসান হাবীব জানান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি এবং মুখোমুখি অবস্থানের কারণে যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার শঙ্কা ছিল। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সন্ধানীসহ সব সংগঠনের কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছি। শিক্ষার্থীদের কোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত মতাদর্শের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। আমরা একটি সুশৃঙ্খল একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।

Read Entire Article