জুবিনের মৃত্যু, মামলা হলো সহকারীর বিরুদ্ধে
আসামের সংগীত সম্রাট জুবিন গর্গ আর নেই। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আর সেখানেই এক মুহূর্তে নিভে যায় সুরের বাতিঘর। কিন্তু তার মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র ধোঁয়াশা। মামলা হয়েছে আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত ও গায়কের ঘনিষ্ঠ সহকারী সিদ্ধার্থ শর্মার বিরুদ্ধে। বিষয়টি তদন্তে নেমেছে আসাম সরকার। গোটা শোবিজ অঙ্গন এখন একটাই প্রশ্নে স্তব্ধ এটা কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরও কোনো রহস্য?
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, আসাম সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আসাম পুলিশ শ্যামকানু ও সিদ্ধার্থ উভয়কেই জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তা ছাড়া শেষ মুহূর্তে গায়কের সঙ্গে যারা ছিলেন, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী আসাম পুলিশকে অনুরোধ করেছেন, মামলার সকল নথিপত্র যেন ‘সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট’-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এদিকে আসামে জুবিনের বাড়ির বাইরে উত্তেজিত জনতা ক্ষোভে ফুঁসছে। কারণ গায়কের সহকারী সিদ্ধার্থের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিল্পীর ভক্ত-অনুরাগীরা। এ পরিস্থিতিতে জুবিনের স্ত্রী গরিমা গার্গ প্রথমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুললেন।
গতকাল দিবাগত রাতে জুবিনের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তা দেন গরিমা। তাতে তিনি বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ এবং আমার প্রণাম। জুবিন আসছে। আমরা সবাই শেষবারের মতো ওকে দেখব। আমি সকলকে অনুরোধ করছি, সিদ্ধার্থের (জুবিনের আপ্ত সহায়ক) বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলবেন না। কারণ সিদ্ধার্থই জুবিনের সব খেয়াল রাখত। অতিমারির সময়ে জুবিনের যখন সিজার অ্যাটাক হয়, তখন ও-ই একমাত্র মানুষ যে নিজের জীবন বাজি রেখে আমার স্বামীকে মুম্বাই নিয়ে গিয়েছিল চিকিৎসার জন্য।’
সিদ্ধার্থকে ভাই দাবি করে গরিমা বলেন, 'গত ২০ বছর ধরে সিদ্ধার্থ আমার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। ও আমার ভাইয়ের মতো। ওর বিরুদ্ধে আপনারা এমন কিছু বলবেন না। এ মুহূর্তে আমাদের পরিবারের ওকে প্রয়োজন। জুবিন আসছে। আমি সকলকে অনুরোধ করছি, ওর শেষযাত্রা শান্তিপূর্ণভাবে হতে দিন। আপনারা আইন মেনে চলুন। পুলিশ-প্রশাসনকেও সাহায্য করুন।’
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, জুবিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কোথায় হবে, তা নিয়ে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় মন্ত্রিসভায় বৈঠক হবে। যদিও কথা প্রসঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জুবিন জানিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যেন আসামেই হয় এবং তার নশ্বর দেহের অবশিষ্টাংশ যেন ব্রহ্মপুত্রের জলে মিশে যায়।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন জুবিন গার্গ। তিনি একাধারে ছিলেন গায়ক, সংগীত পরিচালক, সুরকার, গীতিকার, সংগীত প্রযোজক, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক। ২০০৬ সালে ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমায় ‘ইয়া আলি’ গান গেয়ে তাক লাগিয়ে দেন জুবিন। তারপর বেশ কয়েকটি সুপারহিট গান উপহার দেন তিনি। পরে বলিউডে খুব একটা কাজ করতে দেখা যায়নি তাকে। তবে আসামের আঞ্চলিক সংগীত নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন এই শিল্পী।