যুক্তরাজ্যে কাজের ভিসা: স্বপ্নের দেশে স্বাচ্ছন্দ্যের চাকরি

2 hours ago 5

যুক্তরাজ্যে কাজের ভিসা বা কর্মী ভিসা নিয়ে উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। ইউরোপের অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই দেশটিতে যেতে হলে বাংলাদেশির অবশ্যই ভিসা নিতে হয়। কাজের ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি পথ হলো দক্ষ কর্মী ভিসা এবং স্বাস্থ্য ও সেবা কর্মী ভিসা। এই ভিসার মাধ্যমে শুধু চাকরি করা নয়, পরিবারকে সঙ্গে আনা, পড়াশোনা চালানো এবং পাঁচ বছর পর স্থায়ী বসবাসের সুযোগও পাওয়া যায়।

যুক্তরাজ্যে কাজের ভিসা কীভাবে পাবেন এবং কী কী সুবিধা মিলবে, চলুন জেনে নেওয়া যাক-

কোন ধরনের ভিসা নেবেন?

** যুক্তরাজ্যে কাজ করার জন্য দুই ধরনের ভিসা সবচেয়ে জনপ্রিয় :

১. দক্ষ কর্মী ভিসা– অনুমোদিত নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগদান করে যোগ্য চাকরি করার জন্য।
২. স্বাস্থ্য ও সেবা কর্মী ভিসা– ডাক্তার, নার্স বা স্বাস্থ্য ও সামাজিক যত্ন পেশাজীবীদের জন্য।

এর বাইরেও বেশ কিছু কাজের ভিসা রয়েছে, যেমন: অস্থায়ী কর্মী ভিসা, গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসা, গ্র্যাজুয়েট ভিসা (পড়াশোনার পর কাজের জন্য),
সিনিয়র বা স্পেশালিস্ট কর্মী ভিসা (আন্তঃকোম্পানি ট্রান্সফার)।

** যোগ্যতা

* অনুমোদিত ব্রিটিশ নিয়োগকর্তার কাছে চাকরির প্রস্তাব থাকা আবশ্যক।
* সার্টিফিকেট অব স্পন্সরশিপ (সিওএস) থাকতে হবে।
* যোগ্য চাকরির তালিকায় (UK Home Office-এর Skilled Worker Eligible Occupations List) থাকা পেশা হতে হবে।
* ন্যূনতম বেতন পেতে হবে। এটি পেশার ধরন বা ‘going rate’-এর ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। যেমন- যুক্তরাজ্যের দক্ষ কর্মী ভিসার জন্য ন্যূনতম বেতন (২০২৪ সালের হিসাব অনুসারে) বছরে ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড (৬৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রায়)। স্বাস্থ্য ও সেবা কর্মী ভিসার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ২৯ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত (৪৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা প্রায়)।
* ইংরেজি ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতা থাকতে হবে (আইইএলটিএসের বি১ লেভেল বা সমতুল্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ)।

** কতদিন থাকতে পারবেন?

* দক্ষ কর্মী ভিসা এবং স্বাস্থ্য ও সেবা কর্মী ভিসা সাধারণত ৫ বছরের জন্য দেওয়া হয়। পরে এর মেয়াদ বাড়ানো যায়।
* ৫ বছর পর ইন্ডেফিনিট লিভ টু রিমেইন (আইএলআর) বা স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করা যায়। তবে এর জন্য অতিরিক্ত শর্ত পূরণ করতে হয়, যেমন:নিরবচ্ছিন্ন বসবাস, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা (বি১ লেভেল বা তার বেশি), Life in the UK Test পাস।

** আবেদন প্রক্রিয়া

* যুক্তরাজ্য সরকারের সরকারি ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হয়।
* নিজের পরিচয় প্রমাণ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে (পাসপোর্ট, সিওএস রেফারেন্স নম্বর, ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি)।
* প্রয়োজনে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হবে।
* আবেদন প্রক্রিয়া শুরুর সর্বোচ্চ সময় হবে চাকরি শুরুর তারিখের ৩ মাস আগে।

** আবেদনের খরচ

* দক্ষ কর্মী ভিসা: চাকরির ধরন ও সময় অনুযায়ী ভিসা আবেদনের ফি হবে ৭৬৯ পাউন্ড থেকে ১ হাজার ১৭৫১ পাউন্ড (প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা পর্যন্ত)।
* স্বাস্থ্য ও সেবা কর্মী ভিসায় আবেদনের ফি ৩০৪ পাউন্ড থেকে ৫৯০ পাউন্ড (প্রায় ৫০ হাজার টাকা থেকে ৯৭ হাজার টাকা)

* স্বাস্থ্যসেবা সারচার্জ: সাধারণ ক্ষেত্রে প্রতি বছর ১ হাজার ৩৫ পাউন্ড (১ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রায়)। তবে স্বাস্থ্য ও সেবা কর্মী ভিসাধারীদের জন্য এই ফি লাগবে না।

* নিজের খরচের জন্য তহবিল: যুক্তরাজ্যে অবস্থানের জন্য ব্যাংকে কমপক্ষে ১ হাজার ২৭০ পাউন্ড (২ রাখ ৮ হাজার টাকা প্রায়) রাখতে হবে। মনে রাখা উচিত, এটি শুধু আবেদনকারীর জন্য। ডিপেনডেন্টদের জন্য অতিরিক্ত তহবিল (জনপ্রতি ২৮৫ পাউন্ড বা প্রায় ৪৭ হাজা টাকা) থাকতে হবে।

** কী করতে পারবেন, কী পারবেন না

* পারবেন: চাকরি করা, পড়াশোনা, পরিবারকে সঙ্গে আনা (ডিপেনডেন্টস), অতিরিক্ত নির্দিষ্ট কাজ করা, স্বেচ্ছাসেবী কাজ।
* পারবেন না: বেশিরভাগ সরকারি সুবিধা নেওয়া, চাকরি পরিবর্তন করা (ভিসা আপডেট না করলে), স্বনিযুক্ত কাজ করা।

** আবেদনের ধাপ

১. চাকরির প্রস্তাব এবং সিওএস পাওয়া।
২. যোগ্যতা ও আর্থিক সক্ষমতা যাচাই।
৩. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত।
৪. অনলাইনে আবেদন।
৫. ফি এবং স্বাস্থ্যসেবা সারচার্জ প্রদান।
৬. বায়োমেট্রিক তথ্য জমা।
৭. প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা (বিদেশ থেকে আবেদনে সাধারণত ৩ সপ্তাহ, যুক্তরাজ্যের ভেতর থেকে আবেদন করলে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে)। তবে প্রায়োরিটি সার্ভিস ব্যবহার করে দ্রুত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়।

** পরামর্শ

ভিসার নিয়ম এবং ফির পরিমাণ যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। তাই অবশ্যই যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে (gov.uk) সর্বশেষ তথ্য দেখে নিন।

সূত্র: যুক্তরাজ্য সরকার

কেএএ/এমএস

Read Entire Article