যুক্তরাজ্য শিগগিরই তাদের অভিবাসন ও আশ্রয় ব্যবস্থা পুনর্গঠনের পথে বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ চলতি মাসের শেষের দিকে এই সংস্কার পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন নীতিমালার কাঠামো গঠনে যুক্তরাজ্য ডেনমার্কের অভিবাসন ব্যবস্থা থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছে— যা ইউরোপের সবচেয়ে কঠোর ব্যবস্থাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত।
কঠোর নীতির দিকে যুক্তরাজ্য
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের এরই মধ্যে ডেনমার্কে পাঠানো হয়েছে, যেন সেখানকার পরিবার পুনর্মিলন নীতি ও অস্থায়ী আশ্রয় অনুমতির নিয়মাবলি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। শাবানা মাহমুদের লক্ষ্য হলো— যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করা এবং দেশে প্রবেশের প্রণোদনা কমানো।
তবে লেবার পার্টির একাংশ এই দিকনির্দেশনার সমালোচনা করেছে। দলের এক বামঘেঁষা সংসদ সদস্য বলেন, ডেনমার্কের মতো পথ অবলম্বন করা অতিরিক্ত কঠোর এবং চরম-ডানপন্থার ছায়া বহন করে।
ইংলিশ চ্যানেলে অব্যাহত অভিবাসন প্রবাহ
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দিনে ১ হাজার ২৬৯ জন অভিবাসী ছোট নৌকায় করে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে— যা দুই সপ্তাহের বিরতির পর নতুন রেকর্ড।
সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত লেবার সম্মেলনে মাহমুদ ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘ব্রিটেনের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে যা কিছু করা দরকার, আমি তা করব।’
ডেনমার্কের নীতি থেকে অনুপ্রেরণা
ডেনমার্কে আশ্রয়প্রার্থীদের একটি বড় অংশকে কেবল অস্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া হয়। নিজ দেশ নিরাপদ মনে করলে সরকার তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠায়। স্থায়ী বসবাসের শর্তও সেখানে কঠোর; পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান ও দীর্ঘ সময়ের আবাস প্রমাণ করতে হয়।
পরিবার পুনর্মিলনের ক্ষেত্রেও কঠোরতা আরোপ করেছে দেশটি। ডেনিশ নাগরিক বা অভিবাসনপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তিন বছর ভাতা গ্রহণ না করা, নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান এবং ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক।
এছাড়া যেসব আবাসিক এলাকায় ৫০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা তথাকথিত ‘অ-পাশ্চাত্য’ পটভূমির, সেসব এলাকা থেকে পরিবার পুনর্মিলনের আবেদন গ্রহণ করা হয় না। ডেনিশ সরকার বলছে, এই পদক্ষেপ সামাজিক সংহতি বাড়াতে সহায়ক, যদিও ইউরোপীয় আদালতের এক পরামর্শক একে জাতিগত বৈষম্যের দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন।
যুক্তরাজ্যের পরিকল্পনা কী
যুক্তরাজ্যের হোম অফিস এরই মধ্যে নতুন নিয়ম প্রণয়নের অপেক্ষায় রিফিউজি ফ্যামিলি রিইউনিয়ন স্কিম স্থগিত রেখেছে। পূর্ববর্তী নিয়মে স্বামী-স্ত্রী ও ১৮ বছরের নিচের নির্ভরশীল সন্তানদের জন্য আয় বা ইংরেজি ভাষা পরীক্ষার শর্ত ছিল না।
তবে মাহমুদের নতুন পরিকল্পনায় এই সুযোগ সীমিত করা হতে পারে। যদিও ডেনমার্কের মতো অতিরিক্ত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা আপাতত নেই, তবুও পরিবার পুনর্মিলনের পথে উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডেনমার্কের অভিজ্ঞতা
ডেনমার্কের অভিবাসন ও সংহতিবিষয়ক মন্ত্রী রাসমুস স্টকলুন্ড বলেন, আমরা বহু দিক থেকে আইন কঠোর করেছি। অপরাধ করলে সহজেই বহিষ্কার করা হয়। পারিবারিক পুনর্মিলন এখন অনেক কঠিন। আমরা এমন ব্যবস্থাও নিয়েছি যেন মানুষ স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যেতে উৎসাহিত হয়।
যদিও যুক্তরাজ্য এখনো ডেনমার্কের মতো আর্থিক প্রণোদনা— যেমন দেশে ফেরার বিনিময়ে প্রায় ২৪ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত সহায়তা— চালুর পরিকল্পনা করছে না, তবুও ওই মডেলের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
বলা যায় যে, শাবানা মাহমুদের নেতৃত্বে লেবার সরকারের এহেন উদ্যোগ এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে যুক্তরাজ্য হয়তো আগামীতে ইউরোপীয় অভিবাসন নীতির মধ্যে নতুন এক কঠোর মানদণ্ড স্থাপন করতে যাচ্ছে।
এমআরএম/জিকেএস

5 hours ago
5









English (US) ·