মার্কিন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত না বদলালে এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যদি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেন তাহলে রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে যাবে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) টিকটক অ্যাপটির মালিকানা প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত এক বিবৃতির বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা সিএনএন।
উল্লেখ্য, টিকটকের ১৭ কোটিরও বেশি গ্রাহক রয়েছে দেশটিতে। দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন মার্কিন আইপ্রণেতারা টিকটক অ্যাপটির চীন-ভিত্তিক মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সকে নিয়ে। এই অ্যাপটির মাধ্যমে চীন সরকার মার্কিন নাগরিকের ওপর নজরদারি করছে বলে জানায় মার্কিন প্রশাসন।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের গণহত্যা নিয়ে কনটেন্ট সেন্সর না করায় টিকটককে 'ইহুবিদ্বেষী' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অনেক মার্কিন রাজনীতিবিদ।
এসব বিষয় সামনে রেখে গত বছর দেশটিরে আইনপ্রণেতারা একটি বিল পাস করে তা আইনে পরিণত করেন। পাসকৃত আইন অনুযায়ী মার্কিন দেশে টিকটকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা মার্কিন নাগরিক অথবা প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকতে হবে। তা না হলে আগামীকাল রোববার থেকে এই অ্যাপটির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
এদিকে অ্যাপটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মার্কিন আদালতে আপিল করা হলেও পরে এই আইন বহাল রাখার রায় দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
এরপর শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিদায়ী মার্কিন প্রশাসন জানায়, অ্যাপটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সিদ্ধান্ত নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাগ্রহণ করতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
টিকটক নিয়ে ট্রাম্পের জাতীয় উপদেষ্টা জানান, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
আদালতের রায়ের পর ট্রাম্প শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে বলেন, টিকটকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে। আর আগে এক পোস্টে তিনি জানান, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে টিকটক নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা আছে কি না, এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, কংগ্রেস আমাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছে, তাই আমিই সিদ্ধান্ত নেব।
টিকটক নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির টেক পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক সারাক ক্রেপস বলেন, ‘প্রযুক্তি নীতির ক্ষেত্রে আমরা সত্যিই অন্ধকারে আছি।’
অন্যদিকে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে টিকটক এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন, হোয়াইট হাউস এবং বিচার বিভাগ যুক্তরাষ্ট্রের ১৭ কোটি ব্যবহারকারীর বাকস্বাধীনতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা উল্লেখ করে যে, ১৯ জানুয়ারির আগে যদি বাইডেন প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে রোববার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দিতে চীনা কোম্পানিটি বাধ্য হবে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, যদি অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায়, তবে বর্তমান ব্যবহারকারীরা আর কোনো আপডেট পাবেন না।
দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন কর্তৃপক্ষ টিকটকের মালিকানা তাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য চাপ দিয়ে আসছে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ তুলে। এই বিষয়ে টিকটক কর্তৃপক্ষ আপিল করেছে এবং গত বছর অ্যাপটির মালিক বাইটড্যান্সকে ১৯ জানুয়ারির মধ্যে টিকটক বিক্রি করতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।