যুক্তরাষ্ট্রে মানবশরীরে মাংসখেকো পরজীবী শনাক্ত

2 weeks ago 10

মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ রোববার জানায়, দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক মানবদেহে পাওয়া গেছে মাংসখেকো পরজীবী, যা ইংরেজিতে ‘নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম’ নামে পরিচিত। আক্রান্ত ব্যক্তি সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশ এল সালভাদর ভ্রমণ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে ফেরেন এবং এরপরই তার দেহে পরজীবীটি শনাক্ত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ৪ আগস্ট সংক্রমণটির কথা নিশ্চিত করে। তবে গোপনীয়তার কারণে ওই রোগীর পরিচয় বা বিস্তারিত জানানো হয়নি। এর আগে দেশটির গবাদিপশু শিল্পের একটি সূত্র জানিয়েছিল, আক্রান্ত ব্যক্তি আসলে গুয়াতেমালা থেকে ফিরেছিলেন। যদিও সরকারি ঘোষণায় সেই তথ্য ভিন্ন।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, মার্কিন জনস্বাস্থ্যের জন্য এ ঝুঁকি খুবই কম। এখন পর্যন্ত দেশটিতে কোনো প্রাণীর মধ্যে এ সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। তবে সংক্রমণের খবর সামনে আসতেই আতঙ্কে কাঁপছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল গবাদিপশু ও গরুর মাংস শিল্প। মধ্য আমেরিকা থেকে শুরু করে মেক্সিকোর দক্ষিণাংশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া স্ক্রুওয়ার্ম উত্তর দিকে এগোচ্ছে, আর সেই হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রও দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এই পরজীবী মূলত মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। মার্কিন কৃষিমন্ত্রী ব্রুক রোলিন্স সম্প্রতি টেক্সাস সফরে ঘোষণা দেন, সেখানে নতুন একটি জীবাণুমুক্ত মাছি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। কৃষি দপ্তরের হিসাব বলছে, কেবল টেক্সাসেই যদি প্রাদুর্ভাব ছড়ায়, তবে গবাদিপশু মৃত্যু, শ্রম ব্যয় ও ওষুধ খরচ মিলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রায় ১৮০ কোটি ডলার।

গবাদিপশু শিল্পের অভ্যন্তরে এ সংক্রমণের খবর গোপনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিফ অ্যালায়েন্স নামের একটি শিল্প সংগঠনের এক নির্বাহী ই-মেইলে বিভিন্ন খামারি ও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে লিখেছেন, মেরিল্যান্ডে এক মানুষের শরীরে পরজীবী পাওয়া গেছে। তবে গোপনীয়তার কারণে ওই রোগীর পরিচয় বা বিস্তারিত জানানো হয়নি।

সাউথ ডাকোটার পশু ডাক্তার বেথ থম্পসন জানিয়েছেন, তারা সিডিসি থেকে সরাসরি নয়, বরং অন্য সূত্রে এ সংক্রমণের খবর পান। তার ভাষায়, আমরা খবর পেয়েছি অন্য চ্যানেল থেকে, তারপর সিডিসির কাছে গিয়ে নিশ্চিত হতে হয়েছে।

স্ক্রুওয়ার্ম আসলে কী?

এটি মাছির মাধ্যমে ছড়ানো এক ধরনের পরজীবী। স্ত্রী মাছি উষ্ণ রক্তের প্রাণীর ক্ষতস্থানে ডিম পাড়ে। সেখান থেকে ফোটে শত শত লার্ভা, যারা ধারালো মুখ দিয়ে জীবন্ত প্রাণীর মাংস খেতে থাকে। চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত প্রাণী বা মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে। নামটি এসেছে লার্ভার খাওয়ার ভঙ্গি থেকে, যেন কাঠে পেরেক ঢুকছে স্ক্রু ঘোরানোর মতো।

মানুষের শরীরের এই সংক্রমণ বিরল হলেও বিপজ্জনক। চিকিৎসা মানে শত শত লার্ভা হাতে করে সরানো, ক্ষত জীবাণুমুক্ত করা। দ্রুত চিকিৎসা পেলে বাঁচা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়াটি কষ্টকর।

অর্থনৈতিক দিক থেকেও ঝুঁকি বিশাল। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর মেক্সিকো থেকে ১০ লাখেরও বেশি গরু আমদানি করে। কিন্তু মেক্সিকোর ভেতরে সংক্রমণ বাড়ায় সীমান্ত দিয়ে পশু আমদানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি ভেরাক্রুজ অঙ্গরাজ্যে মার্কিন সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৭০ মাইল দক্ষিণে নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিকভাবে পশু বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম এরই মধ্যে রেকর্ড ছুঁয়েছে, কারণ সাত দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গরুর পাল সবচেয়ে কম। এর মধ্যে মানবদেহে স্ক্রু-ওয়ার্ম শনাক্ত হওয়ার খবর গোপন রাখার চেষ্টা ও শিল্পের উৎকণ্ঠা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্যও রাজনৈতিক চাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মেক্সিকোও এই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে। দেশটি ৫১ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন জীবাণুমুক্ত মাছি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ছে। বর্তমানে পানামা সিটিতে একমাত্র সক্রিয় কেন্দ্রটি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১০০ মিলিয়ন জীবাণুমুক্ত মাছি ছাড়তে পারে। অথচ সংক্রমণ ঠেকাতে লাগবে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মাছি।

ষাটের দশকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্ক্রু-ওয়ার্ম নির্মূল করা হয়েছিল ব্যাপক হারে জীবাণুমুক্ত পুরুষ মাছি ছেড়ে। তারা স্ত্রী মাছির সঙ্গে মিলিত হলেও ডিম ফুটত না। এখনো সেই একই কৌশল আবার সামনে আনতে হচ্ছে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএএইচ

Read Entire Article