বাংলাদেশের ওষুধশিল্পে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করলো গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত করোনা প্রতিরোধী এমআরএনএ-ভিত্তিক টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্ব (পেটেন্ট) লাভ করেছে। দেশের স্বাধীনতার পর এটাই প্রথমবার কোনো টিকা বা ওষুধ উদ্ভাবন যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্ব স্বীকৃতি পেলো।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে গ্লোব বায়োটেকের প্রধান গবেষক ড. কাকন নাগ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এটি কেবল একটি টিকার পেটেন্ট নয়, এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
টিকার যাত্রা
গ্লোব বায়োটেক ২০১৫ সাল থেকে জিনভিত্তিক চিকিৎসা ও জটিল রোগের আধুনিক ওষুধ তৈরির গবেষণায় কাজ করছে। করোনা মহামারির সময় ড. কাকন নাগ ও ড. নাজনীন সুলতানার নেতৃত্বে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ তৈরি শুরু হয়।
২০২০ সালে টিকার জেনেটিক কোড যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের ন্যাচার সাময়িকীতে বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন এবং যুক্তরাষ্ট্রের এলসেভিয়ারের ভ্যাকসিন সাময়িকীতে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। একই বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে কোভিড টিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
বিশেষত্ব
গ্লোব বায়োটেকের দাবি, ‘বঙ্গভ্যাক্স’ হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র এক-ডোজে কার্যকর এমআরএনএ টিকা, যা বিভিন্ন করোনা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। এ টিকায় ব্যবহৃত হয়েছে নিজস্ব উদ্ভাবিত ন্যানোটেকনোলজি, যা ভবিষ্যতে কেবল এমআরএনএ নয়, ডিএনএ, সাবইউনিট, ইনঅ্যাক্টিভেটেড বা রিকম্বিনেন্ট ভাইরাসভিত্তিক টিকা তৈরির সুযোগ করে দেবে।
- আরও পড়ুন
মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার অনুমতি দিলো ঔষধ প্রশাসন
টাইফয়েড প্রতিরোধে অক্টোবরে দেশজুড়ে টিকাদান ক্যাম্পেইন
গবেষণার অগ্রগতি
টিকাটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বানরের ওপর সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর অনুমোদন দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত মেধাস্বত্বে মোট ৩০টি উদ্ভাবনী দাবি অনুমোদন পেয়েছে, যা প্রযুক্তিগতভাবে সম্পূর্ণ নতুন ও মৌলিক হিসেবে স্বীকৃত।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
গ্লোব বায়োটেক বলছে, এই অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের টিকা নির্ভরতা কমবে, স্বনির্ভরতা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ ধরনের উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ড. কাকন নাগ বলেন, বঙ্গভ্যাক্স কেবল করোনা নয়- ভবিষ্যতে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, অটোইমিউন রোগ, রক্তের জটিল অসুখসহ নানান কঠিন রোগের আধুনিক চিকিৎসা ও ওষুধ উদ্ভাবনের পথ খুলে দেবে।
এসইউজে/কেএসআর/জেআইএম