যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সেদেশে যাওয়ার জন্য এইচ-১বি ভিসার ফি বাড়িয়ে এক লাখ ডলার ধার্য করেছে। এরপরেই চীনের ‘কে-ভিসা’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। চলতি বছরের আগস্টে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রতিভাবান ব্যক্তিদের নিজের দেশে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ‘কে-ভিসা’ চালুর ঘোষণা দেয় চীন। সেদেশের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ভিসা অক্টোবর থেকেই দেওয়া শুরু হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯০ সাল থেকে ‘এইচ-১বি’ ভিসা ব্যবস্থা চালু হয়। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অঙ্কশাস্ত্রের সঙ্গে জড়িত দক্ষ লোকজনকে এই ভিসা দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ‘এইচ-১বি’ ভিসা ভারতীয়রাই পেয়ে এসেছেন এতদিন। তালিকায় এরপরেই রয়েছেন চীনের নাগরিকরা।
‘নিউজউইক’ পত্রিকা চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে লিখেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। তবে মন্ত্রণালয় এটা জানিয়েছে যে বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রতিভাকে চীন স্বাগত জানাবে। ‘কে-ভিসা’ চালু করার উদ্দেশ্য হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের প্রতিভাবান ব্যক্তিরা যেন চীনে গিয়ে কাজ করতে পারেন।
‘কে-ভিসা’র বিশেষত্ব
বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের এরই মধ্যে যে ১২ ধরনের ভিসা চালু আছে, তার চেয়ে ‘কে-ভিসা’ আলাদা। এই ভিসা নিয়ে চীনে যাওয়া ব্যক্তিকে দেশে প্রবেশ করা, সময়সীমা আর সেখানে বসবাস করার ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা দেওয়া হবে।
এই ভিসা নিয়ে চীনে যারা যাবেন, তারা শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে পারবেন। একই সঙ্গে সেদেশে ব্যবসা ও শিল্প-স্থাপনও করতে পারবেন তারা।
তবে এই ভিসার সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো যে, চীনের কোনো নিয়োগ-কর্তা বা প্রতিষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণপত্র না পেলেও আবেদন করা যাবে। ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়াও সুবিধাজনক করা হচ্ছে। সদ্য স্নাতক, গবেষক ও শিল্পদ্যোগীদের জন্য ‘কে-ভিসা’ বেশি সুবিধাজনক হবে। এই ভিসা পেতে গেলে চীনে কোনো চাকরির অফার না থাকলেও হবে। ওই দেশে গিয়েই যে কেউ চাকরি খুঁজে নিতে পারেন।
কারা লাভবান হবেন?
ভারত আর চীনের সম্পর্কে উন্নতি হতে থাকলে ভারতীয়দের পক্ষে চীনে যাওয়া সুবিধাজনক হয়ে উঠবে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অধ্যয়ন কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক অরবিন্দ ইয়েলেরি বলেন, চীন সাংহাই ও শেনজেনসহ বেশ কিছু প্রদেশে টেকনোলজি পার্ক গড়ে তুলেছে। এগুলোতে চীনের বড়সড় বিনিয়োগ আছে। চীন সরকার ২০০৬-০৭ সাল থেকেই ভারতের আইআইটিগুলো থেকে বড় সংখ্যায় প্রকৌশলীদের নিয়ে যাচ্ছে।
ক্রিটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রকৌশলীদের সংখ্যা বেশি। এদের এক শতাংশও যদি চীনে চলে যায় তাহলে সেখানে তাদেরই সংখ্যাধিক্য হবে। চীনা সংস্থাগুলো প্রযুক্তি গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য নিজেদের সরকারের কাছ থেকে সস্তায় ঋণ নেয়, কিন্তু তার সঠিক ব্যবহার করতে পারে না। এ ব্যাপারে ভারতীয় প্রকৌশলীরা তাদের এই সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারবেন বলে মনে করেন অরবিন্দ ইয়েলেরি।
তিনি বলেন, শুধু চীন নয়, তাইওয়ানও প্রযুক্তিবিদদের জন্য তাদের দরজা খুলে দিয়েছে। তাই যারা ‘এইচ-১বি’ ভিসা পাবেন না, তারা তাইওয়ানে যাওয়ার কথাও ভাবতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, ভিসা ফি বাড়ানোর জন্য ক্ষতি হবে আমেরিকার আর তার লাভ তুলবে এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো। চীনের জন্য এটা একটা সুযোগ। সেজন্যই তারা ‘কে-ভিসা’র ওপর জোর দিতে শুরু করেছে। তারা বারবার বলছে যে বিশ্বের প্রতিভাবান পেশাজীবীদের জন্য চীন একটা বড় সুযোগে।
চীনে কাজের পরিবেশ কেমন?
এই প্রশ্নের জবাবে অরবিন্দ ইয়েলেরি বলেন, তিনি নিজে সেদেশে কাজ করেছেন। সেখানকার নীতিমাল খুবই শক্তপোক্ত। আবেদন করা থেকে শুরু করে নিয়োগ পাওয়া পর্যন্ত, এমনকি বিদেশ থেকে যাওয়া বিশেষজ্ঞদের জন্য থাকার জায়গা খুঁজে দেওয়া সব কিছুই খুব কম সময়ের মধ্যে হয়ে যায়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
টিটিএন