প্রথমবারের মতো রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দূরপাল্লার ‘এটিএসিএমএস’ (ATACMS) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে ইউক্রেন। এই ঘটনাটি কেবল যুদ্ধের মাত্রা বাড়ায়নি, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেন ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে ৬টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে ৫টি রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিহত করা হয়। অন্য একটি ক্ষেপণাস্ত্র খোলা জায়গায় পড়ে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি করে। যদিও এতে বড় ধরনের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবু এটি যুদ্ধের জটিলতা আরও গভীর করেছে। খবর আরটি’র।
ক্রেমলিনের কঠোর প্রতিক্রিয়া
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ইউক্রেন সংঘাতকে বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তার মতে, ‘এটিএসিএমএস হামলা একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ যে পশ্চিমারা সংঘাতকে আরও তীব্র করতে চাইছে।’
ইউক্রেনের দাবি ও বাস্তবতা
ইউক্রেনীয় মিডিয়া দাবি করেছে, ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে একটি গোলাবারুদের ডিপো লক্ষ্য করে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এটিকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ডে ইউক্রেনের প্রথম এটিএসিএমএস হামলা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তারা এই দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেননি।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা
এই ঘটনার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বিবেচনা করবে। আরটি’র প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন এই ডিক্রির মাধ্যমে পুতিন রাশিয়ার পারমাণবিক নীতির আওতা আরও বিস্তৃত করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা কেবল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেই তীব্র করবে না, বরং এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাও উস্কে দিতে পারে। ক্রেমলিন বারবার সতর্ক করেছে, পশ্চিমা অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানো হলে এটি ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি সংঘাতের পথ প্রশস্ত করবে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাটি পশ্চিমা বিশ্বের জন্য একটি কঠিন বার্তা বহন করছে। একদিকে রাশিয়া তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করছে, অন্যদিকে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহারের প্রভাব কীভাবে বৈশ্বিক সংঘাতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে তা নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিশ্ব সম্প্রদায় এখন এই সংঘাতের পরবর্তী ধাপ নিয়ে শঙ্কিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।