লেখক ও চিন্তক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, অনেকে বলেন- ২০০৮ বা ২০১৪ সাল থেকে ফ্যাসিবাদের সূচনা হয়েছে। আমি বলি- বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদীর সূচনা হয়েছে যারা যুদ্ধ করেনি তাদের জাতির জনক বানানো দিয়ে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বেনার নিউজ বাংলা আয়োজিত ‘কী চাই নতুন বাংলাদেশে’ শীর্ষক ফোরাম আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ ছাড়া তিনি বলেন, যারা যুদ্ধ করেছে, ত্যাগ শিকার করেছে, তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আমরা তরুণদের কাছে চিরঋণী তারা আমাদের হারান স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এসময় তিনি ৫ আগস্টকে তৃতীয় স্বাধীনতা বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সমতাভিত্তিক দেশ চাই, আমাদের লক্ষ্য হবে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। পশুকেও নির্যাতন করা অন্যায়। কোনো মানুষকে যদি আপনি মানুষ মনে করেন তাহলে আর অন্যায় করবেন না। নতুন বাংলাদেশে আমি চাই না কোনো ধর্মকে নিপীড়ন করা হোক। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সবার।
শ্রমিকদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মজুরি সংস্কার কমিশন এখনো হয়নি, এটা করা দরকার। যারা আমাদের দেশের ভিত্তি তাদের মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই। ১৮ হাজারের নিচে আয় যদি ধরা হয় তাহলে প্রকৃতপক্ষে ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ইতিহাসকে আসলে যারা ভুলিয়ে দেয় তারা ফ্যাসিবাদ। ইতিহাস মোটেও অতীত নয়। ইতিহাস হচ্ছে বর্তমান। চিন্তার ক্ষেত্রে, ধ্যান ধারণার ক্ষেত্রে, সবক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীনতা থাকতে হবে। এদেশের শতকরা ২৬ জন লোক এখনো স্বাক্ষর করতে পারে না। শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বজনীনতা আনতে হবে।
পাশাপাশি তিনি বলেন, শিক্ষা হবে বিনামূল্যে, শিক্ষার জন্য কেন পয়সা লাগবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে যায়, কারণ আমরা তাদের জন্য এখনো কোনো আশার প্রদীপ জ্বালাতে পারিনি। আমাদের মানবাধিকারের আগে নাগরিকদের অধিকারের কথা বলতে হবে। মানবাধিকার নিশ্চিতের প্রথম শর্ত সবাইকে আইনের অধীনে থাকতে হবে।
বাংলা ভাষা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলা ভাষা রাষ্ট্রের কোনো কাজেই ব্যবহার করা হয় না। বাংলা এখন আন্তর্জাতিক দিক থেকেও প্রায় বিলুপ্ত ভাষা। কিছুদিন আগে বিবিসি বাংলা রেডিও বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের উচিত আগে বাংলাদেশের সব কাজ বাংলায় হবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। সবকিছুর নাম বাংলায় করতে হবে। রাষ্ট্রভাষা যেহেতু বাংলা, আমাদের সব কিছু বাংলা হতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, শিক্ষক ও গবেষক ড. মোবাশ্বার হাসান, অভিনয়শিল্পী নওশাবা আহমেদ প্রমুখ।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, যাদের হাতে রক্ত লেগে আছে, যারা এই ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে, তাদের আগে বিচার করতে হবে। তা না হলে আমরা এই ইতিহাসকে ধারণ করতে পারব না, শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। এদের (আওয়ামী লীগ) মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং ওরা একটা বড় গল্প নিয়ে আসছে ৩ হাজার পুলিশ মারা গেছে, তাই আমরা এগুলো করেছি। এটাতেই তারা এই যে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলোকে মেরেছে সেটার বৈধতা দিচ্ছে। এই জায়গায় কোনো ধরনের ছাড় হবে না, এদের বিচার হবেই। যার হাতে রক্ত আছে তার আগে বিচার করতেই হবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা আন্দোলনের সময় দেখেছি মিডিয়াগুলো সরকার, ডিজিএফআইয়ের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সংবাদ প্রচার করেছে। মিডিয়ার যে কালেক্টিভ প্রচারণা হওয়া দরকার ছিল সেটি আমরা দেখতে পাইনি। আপনাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে আপনারা গণভবনমুখিতা থেকে বের হয়ে জনগণমুখী সাংবাদিকতা করবেন। সরকার যেটা শুনতে চায় সেটা প্রচার করা হচ্ছে প্রেস রিলিজ, যেটা শুনতে চায় না সেটা প্রচার করাই হচ্ছে নিউজ। আপনারা ফ্যাক্টকে তুলে ধরুন। মানুষের কথা তুলে ধরুন তাহলে আপনারা সবসময়ই প্রাসঙ্গিক থাকবেন।