যুদ্ধবিরতি নয়, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় নতুন জোর

3 weeks ago 8

যুদ্ধ শেষ করার আলোচনায় ওয়াশিংটনে হওয়া বিশেষ শীর্ষ বৈঠকের পর ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রশ্নে নতুন করে মনোযোগ পড়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির সুনির্দিষ্ট পথ এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে কিয়েভের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি পেয়ে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা কিছুটা আশাবাদী হলেও বহু প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত বিশেষ করে, রাশিয়া আলোচনায় কতটা রাজি হবে, সেটিই মূল বিষয়।

সোমবার (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউজে অনুষ্ঠিত বৈঠককে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ‘ইউরোপের ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত শেষ করার বড় অগ্রগতি’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি জানান, এই উদ্যোগ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ট্রাম্পকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পথ খুলে দিতে পারে।

বৈঠকে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতারা ট্রাম্প ও জেলেনস্কির পাশে ছিলেন। ফেব্রুয়ারির বৈঠকে হোয়াইট হাউজে তৈরি হওয়া উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির বিপরীতে এবার উভয়ের সম্পর্ক অনেক উষ্ণ ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথ এখনো অনিশ্চিত।

বিশ্লেষকদের হিসাব অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে। তাছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানায়, সোমবার (১৮ আগস্ট) রাতে রাশিয়া ২৭০ ড্রোন ও ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা চলতি মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় আক্রমণ। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলছে, লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় পলতাভা অঞ্চলের তেল শোধনাগার, যেখানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

সাবেক ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা কূটনীতিক জন ফোরম্যান বলেন, ভালো খবর হলো- হোয়াইট হাউজে কোনো বিস্ফোরণ ঘটেনি। ট্রাম্প ইউক্রেনকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাননি বা সহায়তা বাতিল করার ঘোষণা দেননি। সবারই মেজাজ ভালো ছিল ও ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক জোট টিকে গেছে। তবে খারাপ দিক হলো, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হবে, সেটা স্পষ্ট নয়।

জেলেনস্কি মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তার কর্মকর্তারা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার খসড়া নিয়ে কাজ করছেন। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের কোনো নিশ্চয়তা আসেনি। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, মস্কো আলোচনার কোনো ফরম্যাটকে প্রত্যাখ্যান করছে না, তবে জাতীয় নেতাদের যেকোনো বৈঠক ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে’।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আগেই স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেনের মাটিতে ন্যাটোর সেনা মোতায়েন রাশিয়া মেনে নেবে না। পাশাপাশি তিনি অধিকৃত নয় এমন ভূখণ্ডও নিজেদের দাবি থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন না। আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এসব শর্ত পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

অন্যদিকে, ট্রাম্প এখনো বলেননি যে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা কী আকারে আসবে। তিনি যুদ্ধবিরতির শর্তকেও আরোপ করেননি, বরং তিনি ইউক্রেনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন- ক্রিমিয়া ফেরত পাওয়ার আশা বা ন্যাটো সদস্যপদ ভুলে যেতে হবে।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের গবেষক ম্যাথিয়াস ম্যাথিজ মন্তব্য করেন, আজ এমন কোনো সমাধান সম্ভব নয় যা একদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপের, অন্যদিকে রাশিয়ার ‘রেড লাইন’কে একসঙ্গে সম্মান জানাবে।

ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা অনেকটা শুল্ক ইস্যুতে অতীতের দ্বন্দ্বের মতো হয়েছে বলে মনে করেন ম্যাথিয়াস ম্যাথিজ। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এড়ানো গেলেও ফলাফল সব সময় আগের চেয়ে খারাপ থাকে।

রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, জেলেনস্কি ও তার মিত্ররা ট্রাম্পকে হারাতে পারেননি। ইউরোপ তাকে ধন্যবাদ দিয়েছে ও তোষামোদ করেছে।

গত জুলাইয়ে তুরস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শেষবার সরাসরি আলোচনা হয়। এর আগে মে মাসে জেলেনস্কি প্রকাশ্যে পুতিনকে সাক্ষাতের আহ্বান জানালেও পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াদেফুল বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন দরজা খুলে দিয়েছেন। এখন পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আসতেই হবে। নাহলে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়াতে হবে। তিনি আরও যোগ করেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিষয়ে ইউক্রেনের মিত্ররা দ্রুত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরির কাজ করছে।

এদিকে, ইউক্রেনের মিত্ররা মঙ্গলবার ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ নামে পরিচিত ফরম্যাটে বৈঠকে বসবে। বৈঠকে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে উপস্থিত থাকবেন। তিনি জানান, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ এখনো আলোচনায় নেই, তবে ন্যাটোর চুক্তির ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের মতো প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

চ্যাথাম হাউজের গবেষক অরিসিয়া লুতসেভিচ বলেন, ট্রাম্প ইউক্রেনকে পুতিনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন- এই আশঙ্কা অন্তত সত্য হয়নি। তবে পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক জেলেনস্কির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সেটি হলে পুতিন তাকে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করার দায়ে অভিযুক্ত করবেন। তখন প্রশ্ন উঠবে, ট্রাম্প কাকে বিশ্বাস করবেন ও ব্যর্থ শান্তি প্রচেষ্টার জন্য কাকে দায়ী করবেন।

ইউরোইন্টেলিজেন্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, এখানে শুধু রাশিয়া কী মেনে নেবে তা নয়, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনের জন্য কতটা করতে পারবে ও করতে চাইবে, সেটিই প্রশ্ন।

সূত্র: রয়টার্স

এসএএইচ

Read Entire Article