যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীনের মামলা: ব্রিটিশ আদালতের রায়ে ঢাকায় উদ্বেগ

3 months ago 36

যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মুঈনুদ্দীন। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন সংগঠন।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, প্রজন্ম ৭১ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এ বিষয়ে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।

সংগঠন তিনটি ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তরের বিরুদ্ধে চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের আসন্ন মানহানির মামলায় তার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে দক্ষ আইনজ্ঞ নিয়োগ করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন আল-বদর বাহিনীর হয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড পান চৌধুরী মুঈনুদ্দীন।

২০১৯ সালে যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীনের ফৌজদারি অপরাধের বিবরণসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল সেই প্রতিবেদন তখনকার টুইটার (বর্তমানে এক্স) হ্যান্ডলে শেয়ার করেন।

তবে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলায় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন মুঈনুদ্দীন। পরে তা দুই দফায় খারিজ হলেও সুপ্রিম কোর্টে ফের মামলা করার আবেদন করেন এ যুদ্ধাপরাধী। গত ২০ জুন যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট মুঈনুদ্দীনকে মামলা করার সুযোগ দিয়ে রায় দেয়।

এ রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিন সংগঠনের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের জড়িত থাকার প্রামাণিক দলিল রয়েছে। তা সত্ত্বেও তাকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করার অনুমতি দেওয়া, বাংলাদেশে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতি একটি মারাত্মক আঘাত।

সংগঠন তিনটি বিবৃতিতে বলেছে, বিশ্বের প্রতিটি দেশের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা আছে, যা স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ যেমন যুক্তরাজ্যের আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে, তেমনি যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের নিজস্ব আইনি প্রক্রিয়ায় চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের মামলার রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। ব্রিটিশ সরকারকে সদ্য প্রদত্ত রায়ের প্রভাব পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে সরকারের কাছে চৌধুরী মুঈনুদ্দীনসহ প্রবাসে পলাতক সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও রায় কার্যকর করার জন্য আইনি ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন নবী, অধ্যাপক ডা. কাজী কামরুজ্জামান, ড. ফওজিয়া মোসলেম, শহীদজায়া সালমা হক, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সাংবাদিক শফিকুর রহমান, সমাজকর্মী আরমা দত্ত, সাংবাদিক আবেদ খান, শিল্পী আবুল বারক আলভী, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, কথাশিল্পী ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম।

আরও সই করেছেন উষাতন তালুকদার, অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, সমাজকর্মী মালেকা খান, সঙ্গীতশিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ভূ-তত্ত্ববিদ মো. মকবুল-এ ইলাহী চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল খালেক, কাজী রিয়াজুল হক, অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত, ড. নূরন নবী, শফিকুর রহমান শহীদ, সুব্রত চক্রবর্ত্তী জুয়েল, যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে, প্রকৌশলী কাজী কামাল ইকরাম, রোকেয়া কবীর, কাজল দেবনাথ, কণ্ঠশিল্পী শাহীন সামাদ, কণ্ঠশিল্পী ডালিয়া নওশিন, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সঙ্গীতশিল্পী ফরিদা পারভীন, অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান, অধ্যাপক ইফতেখারউদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মো. আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, ড. কানিজ আকলিমা সুলতানা, নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার, ডা. ইকবাল কবীর, অধ্যাপক মো. আলমগীর কবীর, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, লেখক-গবেষক গোলাম কুদ্দুস, আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ, শহীদ সন্তান মেঘনা গুহঠাকুরতা, শহীদ সন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন ও অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া।

শহীদ সন্তান শমী কায়সারসহ বিবৃতি দিয়েছেন অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, অ্যাডভোকেট এম সাঈদ আহমেদ রাজা, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদ সন্তান নূজহাত চৌধুরী শম্পা, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, লেখক-ব্লগার মারুফ রসূল, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু, সাংবাদিক হারুন অর রশিদ, সংস্কৃতিকর্মী কাজল ঘোষ, সংস্কৃতিকর্মী শামসুল আলম সেলিম, সমাজকর্মী আবু সাদাত মো সায়েম, চারুশিল্পী ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী, চলচ্চিত্রনির্মাতা ইসমাত জাহান, ছাত্রনেতা পলাশ সরকার, সাংবাদিক মহেন্দ্রনাথ সেন, সংস্কৃতিকর্মী বাহাউদ্দিন গোলাপ, ছাত্রনেতা আশেক মাহমুদ সোহান, সমাজকর্মী কেশব রঞ্জন সরকার, অ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ, সমাজকর্মী এ, বি, এম মাকসুদুল আনাম, অ্যাডভোকেট মালেক শেখ, সমাজকর্মী কামরুজ্জামান অপু, ছাত্রনেতা হারুণ অর রশিদ, ছাত্রনেতা অপূর্ব চক্রবর্তী, লেখক আলী আকবর টাবি, চলচ্চিত্র নির্মাতা লুবনা শারমিন, সহকারী অধ্যাপক শরীফ নুরজাহান, সাংবাদিক সুশীল মালাকার, সাংবাদিক আবু সালেহ রনি, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, তপন পালিত, ব্লগার অমি রহমান পিয়াল।

চলচ্চিত্রনির্মাতা পিন্টু সাহা, সমাজকর্মী হাসান আব্দুল্লাহ বিপ্লব, অ্যাডভোকেট রত্নদীপ দাস রাজু, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী, শহীদসন্তান সাংবাদিক জাহিদ রেজা নূর, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রানী শীল, তানজীর মান্নান রূপন, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এ,এস,এম শরিফুল হাসান, চারুশিল্পী ইফতেখার খান বনি, সমাজকর্মী আলমগীর কবির, সমাজকর্মী মো. হেলালউদ্দিন, সমাজকর্মী সুমনা লতিফ, সংস্কৃতিকর্মী শামস রশীদ জয়, ডা. সাদমান সৌমিক সরকার, আবৃত্তিশিল্পী আরেফিন অমল, অধ্যাপক যোগেন্দ্রনাথ সরেন, মানবাধিকারকর্মী ফয়সাল হাসান তানভীর, সমাজকর্মী প্রাণতোষ তালুকদার, সমাজকর্মী আবদুল হালিম বিপ্লব, সমাজকর্মী কাজী রেহান সোবহান, সমাজকর্মী মোঃ আবদুল্লাহ, সমাজকর্মী আনোয়ার ইসলাম রানী, অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক, সাংবাদিক দীলিপ মজুমদার, সংস্কৃতিকর্মী রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, সংস্কৃতিকর্মী সুচরিতা দেব, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এইচএম রিয়াজ আবীর, লেখক সাব্বির রহমান খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমেদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী খলিলুর রহমান, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল, লেখক চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, ডা. একরাম চৌধুরী, গবেষক তাপস দাস, সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।

এফএইচ/এসআইটি/জিকেএস

Read Entire Article