দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি যে গর্তে পড়েছে তা থেকে উঠে দাঁড়াতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ বিষয়ে বর্তমান সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, সমস্যা আছে, আমরা কাজ করছি। যে গর্তে আমরা পড়েছি তার থেকে আমরা উঠতে পারবো, তবে সময় লাগবে। আমি আগেও বলেছি যে আমাদের ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের নিচে নেমেছে। অক্টোবর থেকে জানুয়ারিতে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ আমদানি বেড়েছে। এলসি খোলাও ব্যাপক হারে বেড়েছে। আমি আশাবাদী রমজানে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হবে না।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রয়ারি) রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে ‘রিকমেন্ডেশনস বাই দ্য টাস্কফোর্স অন রিস্ট্র্যাটেজাইজিং দ্য ইকোনমি’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় অধিবেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন
- টাকা ছাপিয়ে নয়, আন্তঃব্যাংক তারল্য সহায়তা পাবে দুর্বল ব্যাংক
- দুর্বল ব্যাংককে তারল্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার পরিকল্পনা নেই: গভর্নর
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ব্যাংকিং খাতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি এবং শাসন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সেশনটিতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সিপিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং ড. মঞ্জুর হোসেন। তারা দুজনেই টাস্কফোর্সের সদস্য।
গভর্নর বলেন, ইসলামি ব্যাংক এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) গ্র্যাজুয়েটেড হয়ে যাবে। তাদের কোনো আর্থিক সহায়তা লাগবে না। এ দুটি ব্যাংকের আওতায় ব্যক্তি খাতে তারল্যের ৫৫-৬০ শতাংশ। তাই অর্ধেকের বেশি সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছি। বাকি ব্যাংকগুলোকেও আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি।
তিনি বলেন, ব্যাংকির খাতের সমস্যা আমরা সবাই জানি। আমরা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছি। কয়েকটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮৭ শতাংশ, যেগুলোকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব নয়। কোনো কোনো ব্যাংকের ১০০ ভাগ ঋণের ৮৭ ভাগ একই পরিবারকে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং রিসোলিউশন অ্যাক্ট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেশ কিছু সরকারি ব্যাংকেরও সমস্যা আছে। আমরা সুপারভিশন করছি। আশা করি খুব শিগগির একটি সিদ্ধান্তে আসবো।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ইন্সুরেন্সের অ্যামাউন্ট দুই গুণ করা হয়েছে। আগে ছিল ১ লাখ, যা এখন ২ লাখ করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের কমপ্লায়েন্স নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা একটি প্রজ্ঞাপনও দিয়েছি।
‘যদি লোন ফেরত দিতে না পারে তাহলে ব্যাংক শেয়ারহোল্ডার হতে পারবে এবং বোর্ডে বসতে পারবে। যদি অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে তাহলে ব্যাংক মেজরিটি শেয়ারহোল্ডার হতে পারবে। এর ফলে লোন নেওয়ার আগে বড় বড় কোম্পানিগুলো যেন চিন্তা করে আমাকে এই লোন ফেরত দিতে হবে’- বলেন তিনি।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, লোন কন্ট্রাক্টের ক্ষেত্রে আমরা একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড কন্ট্রাক্টের ব্যবস্থা করছি, যেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি লোনের ক্ষেত্রে কোনো শব্দগত পার্থক্য না থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করি তিন-চার মাসের মধ্যে কেবিনেটে নিয়ে যেতে পারবো। যেন ভবিষতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না হয়।
গভর্নর আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে পুনর্গঠন করছি, যা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ডিপার্টমেন্ট বন্ধ করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডিপার্টমেন্টে লোকবল স্থানান্তর করছি। ডিজিটাল ব্যাংকিং নিয়ে এ মুহূর্তে কাজ করছি না। আরও একটু সময় লাগবে। আমরা বেশি মনোযোগ দিচ্ছি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের দিকে। কিউআর কোড, পেমেন্ট সিস্টেম আরও কীভাবে উন্নত করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখছি। আইটি সিস্টেমকে ঢেলে সাজানোর পদক্ষেপ নিয়েছি। যা ক্যাপাসিটি, ফাংশনালিটি বাড়াবে। ডাটার ক্ষেত্রে যতো বেশি স্বচ্ছতা আনা যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত। রপ্তানি তথ্য প্রকাশের সময় কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কাজ করছি। ১৯৭২ সাল থেকে সারাদেশের প্রতিটি এলাকায় কত টাকা ডিপোজিট হয়েছে এ বিষয়ে আমরা একটি জরিপ করেছি। এটি করা গেলে সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যাবে।
এসআরএস/এমকেআর