যে দল মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হবে তাদের ভবিষ্যৎ নেই

3 months ago 71

যে রাজনৈতিক দল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হবে তার কোনো ফিউচার (ভবিষ্যৎ) নেই। এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আগামীর রাজনীতি আগের রাজনীতির মতো হবে না। আগামীর রাজনীতি সত্যিকার অর্থে পরিবর্তনশীল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য করতে হবে। যে সমস্ত রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দল এটা বুঝবে না, তাদের কোনো রাজনৈতিক ফিউচার নেই।

মঙ্গলবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দশ মাস-গণতন্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এক হাজার সংস্কার করে বাংলাদেশে কোনো লাভ হবে না। যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হয়। সংস্কারের প্রথম ধাপ হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। যে পরিবর্তনের আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে, সেটা যদি আগামীর রাজনীতি দিতে না পারে, সে রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলের কোনো ফিউচার আছে বলে আমি মনে করি না।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব যারা পালন করছেন, তাদের এ দায়িত্ব দেওয়ার পেছনে যে শক্তিগুলো ছিল তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে- ছাত্র-জনতার সমর্থন, দ্বিতীয় হচ্ছে- রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন এবং তৃতীয় শক্তি হচ্ছে- বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী। এছাড়া শেখ হাসিনার পতনের পেছনেও এই তিনটা শক্তি কাজ করেছে। সংস্কার হচ্ছে মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার সংস্কার। সুতরাং এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এই তিনটা শক্তি যারা এই সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছিল, তার মধ্যে আজকে ছাত্রজনতার অবস্থানটা কোথায়? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, একটা ছোট সংখ্যা আছে যারা অব্যাহতভাবে একটা দল গঠন করেছে। তারা নিজেদের অবস্থান এবং একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে ফিরে যাওয়ার জন্য আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বাকি যারা ছাত্রদের মধ্যে ছিল তারা কী বলছে এটা তো শুনতে হবে। এরপর হচ্ছে রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি সবচেয়ে বড় দল। বিএনপির সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছে, আজ তারা কোথায় এবং তাদের অবস্থানটা কোথায়? এটা বিবেচনা করার দরকার আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, তৃতীয় হচ্ছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী। তাদের অবস্থান কোথায়? যেদিন এই সরকারকে বসানো হয়েছে, সেদিনের সঙ্গে যদি আজকে আমরা কম্পেয়ার করি তাহলে কোন অবস্থান থেকে আজকে আমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি- এটা সবার অ্যানালাইসিস করা দরকার। কোথায় যেন এখন একটা বিভক্তি হয়ে গেছে। এই বিভক্তির দায় কে নেবে? যারা অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক অর্ডারে ফিরে যেতে চেয়েছিল, সেটা কেন আজকে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে? যারা সমর্থন দিয়েছে, তারা কেন এখন দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে থাকবে? এটার একমাত্র কারণ হচ্ছে যে প্রত্যাশা নিয়ে গণতান্ত্রিক অর্ডারে ফিরে যাওয়া এবং যে কাজগুলো করা দরকার ছিল, সেটা দৃশ্যমান হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, সংস্কারের ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত দেখছি না। সংস্কার সংস্কার করে ওরা (অন্তর্বর্তী সরকার) গলা শুকিয়ে ফেলেছে। সকলে সংস্কারপত্র অলরেডি জমা দিয়েছি। ড. ইউনূস প্রথম থেকেই বলছেন, যেখানে ঐকমত্য হবে, সে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। সবাই সংস্কারপত্র জমা দেওয়ার পরেও কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, এ বিষয়গুলো জাতিকে জানানো হচ্ছে না কেন? এটা তো একটা রহস্যের ব্যাপার। আমরা যেদিন দেখা করেছি এই প্রশ্নটা ঐদিনও বলেছি। ঐদিন আলী রিয়াজ ছিলেন তো। কেন জানানো হচ্ছে না, সমস্যাটা কোথায়? এটাও বলা হয়েছে যেগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে তার বাইরে যদি দুইটা বিষয়ে নেগোসিয়েশন থাকে, সেটাও একটা সময়সীমার মধ্যে সমাধান করা যায়। আর যদি এগুলোতে ঐকমত্য না আসে, তাহলে যতটুকু ঐকমত্য হয়েছে সেটাই তো সমাধান হওয়া দরকার।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ড. ইউনূস বলেছেন বেশি হলে জুন আর কম হলে ডিসেম্বর। এখানে কম-বেশির প্রশ্নটা কোথা থেকে আসলো? উনিতো নিজেই বলেছেন ঐকমত্য যেগুলো হবে, তার ভিত্তিতেই সংস্কার হবে। আবার বেশি আর কমের ইস্যুটা কোথা থেকে এলো? তাহলে কোনটা বেশি আর কোনটা কম, এটা কে নির্ধারণ করবে? আমি যেটা মনে করি, কেউ যদি বলতে পারে আমরা কমের মধ্যে সমাধান চাই। আর কেউ যদি বেশি চায় সেটাও ভালো। বেশির মধ্যেও সমাধান আছে, কমের মধ্যেও সমাধান আছে৷ বেশির মধ্যে যদি আমি ওনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) কথার মধ্যে আসি তাহলে তো ঐকমত্যের প্রয়োজন হচ্ছে না। ঐকমত্য তো বেশিও হবে না, আবার কমও হবে না। ঐকমত্যটা কোথায় জানার জন্য এবং সনদের যে কথাটা বলা হয়েছে, সে সনদটা সই করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য গোঁজামিলের কোনো সুযোগ নেই।

আমীর খসরু বলেন, বিচারের কথা যেখানে বলছে, বাংলাদেশে এমন কোনো লোক নেই যারা আওয়ামী লীগের বিচার চায় না। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি। আমাদের চেয়ে বেশি বিচার চায় অন্য কোনো দল, তা তো হবে না। আমাদের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কেউ হয়নি। সুতরাং বিএনপিই বিচারের জন্য বেশি আগ্রহী। সরকারের কাজ হচ্ছে বিচারের আওতায় আনা। বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে এদের বিচার করতে হবে। তাহলে দশ মাসে সরকার এদেরকে বিচারের আওতায় আনতে পারছে না কেন। সরকার যদি তাদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়, আমরা বিচারের আওতায় আনব। কিন্তু বিচার করবে স্বাধীন বিচার বিভাগ, সরকার করবে না। আমরা শেখ হাসিনার মতো বিচার করে, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না।

সংস্কারের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখছি না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিচারের ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা দেখছি না। তারপরেও রোডম্যাপটা দিতে এত ভয় কেন? আর নির্বাচন নিয়ে এত ভয় কেন? যাদের নির্বাচন দিতে ভয়, অর্থাৎ জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জনগণের ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই। গণতান্ত্রিক অর্ডারের ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই। আজকে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাহলে তাদের গণতান্ত্রিক অর্ডারে ফিরে যেতে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে! নির্বাচন নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে! নির্বাচনের বিপক্ষে সংস্কার এবং বিচারের বিষয়টা নিয়ে আসার অর্থ কি? এটা কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় না। সবগুলো কিন্তু মিউচুয়াল এক্সক্লুসিভ। সবগুলো চলমান প্রক্রিয়া।

আমীর খসরু বলেন, ৫-১০ দশজন লোক নিজেদের বিজ্ঞ মানুষ হিসেবে মনে করে যে জনগণকে বাইরে রেখে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যবধানটা কোথায় তা আমি দেখতে পাচ্ছি না। গণতন্ত্রের স্পিরিট থেকে সরে গিয়ে অনির্বাচিত সরকারের দিনগুলো যত দীর্ঘায়িত হবে, তত বেশি অস্থিতিশীল হবে দেশ। তত বেশি মানুষ অধিকারহীন হবে। অনির্বাচিত সরকার যদি বেশিদিন ক্ষমতায় থাকে তাহলে তার আচরণ স্বৈরাচারের মতো হতে বাধ্য। সেটা অনির্বাচিত সরকার যে ফরমেটেই আসুক না কেন। যাদের সমর্থনে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যাদের সমর্থনে আমরা একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণ দেখতে চেয়েছি এ সরকারের কাছ থেকে, সেই সমর্থন কিন্তু থাকবে না। আমরা সেই অবস্থায় যেতে চাই না। আমরা চাই সরকার একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুক।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আব্দুন নুরের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব বাবর চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান।

কেএইচ/এএমএ/এএসএম

Read Entire Article