শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র ছাড়াই ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার শর্তে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পূর্ব নির্ধারিত বুড়ি পোতাজিয়া এলাকায় ৫১৯ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাঁচটি নতুন প্রকল্প, দুটি সংশোধিত প্রকল্প ও মেয়াদ বৃদ্ধির তিনটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এছাড়া পরিকল্পনা উপদেষ্টা নয়টি প্রকল্পের বিষয়ে একনেক সদস্যদের অবহিত করেন।
- আরও পড়ুন
- রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ ঘণ্টা অনশন ১৫ শিক্ষার্থীর
- আলটিমেটাম দিয়ে সড়ক ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা
- যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়ক অবরোধ, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ
প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ শুরু করতে হবে। মূলত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে এই শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। যদিও সম্প্রতি পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসের স্থানটি পরির্দশন করেছেন।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বুড়ি পোতাজিয়ায় ১০০ একর জমিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা এতে গুরুত্বপূর্ণ বিস্তীর্ণ জলাভূমি চলনবিলের পানিপ্রবাহের ক্ষতি হবে দাবি করে ঘোর বিরোধিতা করে আসছিলেন।
সরকারি একটি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত স্থানটি বছরে ৪ মাস পানির নিচে ডুবে থাকে। এটি ৯ থেকে ১৪ মিটার উচ্চতায় ভরাট করতে হবে। এজন্য বালু লাগবে ৩৬ লাখ ৬১ হাজার ৬৩০ ঘনমিটার। ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করতে হবে একটি সড়ক ও সেতু। পানির ঢেউ প্রতিরোধে দিতে হবে বাঁধ। এসবের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৮ কোটি টাকা।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১০০ একরের মধ্যে এরইমধ্যে ৪ একর ভরাট করার কারণে বড়াল নদের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাকি ৯৬ একর ভরাট করা হলে বর্ষাকালে চলনবিল ও বড়াল নদের পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুষ্ক মৌসুমে জায়গাটি গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখানে স্থাপনা হলে গোচারণ ভূমির পরিমাণ কমে আসবে। জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকাটি ছিল চারণভূমি। ২০১৮ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় অকৃষি জমি হিসেবে ছাড়পত্র দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণে অনাপত্তি সনদ দেয়। তখন বলা হয়েছিল, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিতে হবে। এখন সেই শর্ত পূরণের শর্ত দিয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে একনেক।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) শিবলী মাহবুব জাগো নিউজকে বলেন, মূলত চলনবিলের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত স্থান থেকে ৬৮ কিলোমিটার দূরে। ওই সময়ে সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হলে চলনবিলের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের মে মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত। এর আগে গত মে মাসে প্রকল্পটি পাসের জন্য একনেকে উঠেছিল, তখন তা আবার পর্যালোচনার জন্য ফেরত পাঠানো হয়।
কিন্তু স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের কঠোর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক সভা। শাহজাদপুর পৌর শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে এই প্রকল্পের স্থান।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) শিবলী মাহবুব জাগো নিউজকে বলেন, চলনবিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত স্থান থেকে অনেক দূরে। সুতরাং কোনো সমস্যা নেই। অনুমোদনের চিঠি আমরা এখনো হাতে পাইনি। এটা পেলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্রের শর্ত দিয়ে প্রকল্পটি একনেক সভা অনুমোদন দিয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে কী কী শর্ত মানতে হবে সেটি অনুমোদনের কপি না দেখে বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ১০০ একর জমির মধ্যে ৬০ একর বনায়ন, পুকুর বা লেকের জন্য বরাদ্দ থাকবে। অবশিষ্ট ৪০ একরে হবে অবকাঠামো, সড়ক ইত্যাদি। আমরা অবশ্যই পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করবো। তবে যদি এমন কোনো শর্ত দেওয়া হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বা দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি করে, তাহলে আমরা আবারও আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় আইন পাস হয় ২০১৬ সালে। ক্লাস শুরু হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। এখন পাঁচটি বিভাগে পড়ছেন ১ হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া শিক্ষক আছেন ৩৪ জন, কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ১৬১ জন। সাত বছর ধরে শাহজাদপুর পৌর শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আটটি ভাড়া ভবনে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে।
এফএ/জিকেএস