নবিজির (সা.) নেতৃত্বে সংঘটিত তাবুক অভিযানে ইন্তেকাল করেন আব্দুল্লাহ জুল-বিজাদায়েন (রা.)। এই তরুণ সাহাবি ইসলাম গ্রহণের কারণে নিজের পরিবার থেকে নিঃস্ব অবস্থায় বিতাড়িত হয়েছিলেন। তার জীবনকাহিনী যেমন বেদনাবিধুর, তেমনই অনুপ্রেরণাময় ও শিক্ষণীয়।
ইসলাম গ্রহণ করার আগে হজরত আব্দুল্লাহর (রা.) নাম ছিল আব্দুল উজ্জা। মক্কায় চাচার আশ্রয়ে বেড়ে ওঠেন তিনি। তরুণ বয়সে চাচার উট-বকরি চরানোই ছিল তার কাজ। মক্কা বিজয়ের আগেই ইসলামের দাওয়াতে তিনি আকৃষ্ট হন, কিন্তু চাচার ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে পারেননি।
মক্কা বিজয়ের পর মানুষ যখন দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করছে, তখন তরুণ আব্দুল উজ্জা চাচার কাছে ইসলাম গ্রহণের অনুমতি চাইলে চাচা তার সব সম্পদ কেড়ে নেন, এমনকি গায়ে থাকা পোশাকও খুলে নেন। নগ্ন অবস্থায় তিনি মায়ের কাছে গেলে মা কেঁদে ফেলেন এবং তাকে একটি কম্বল দেন। তিনি কম্বলটি ছিঁড়ে অর্ধেক শরীরের নিচে, অর্ধেক ওপরে জড়িয়ে রওয়ানা হন মদিনার উদ্দেশ্যে।
দুই সপ্তাহের কষ্টকর যাত্রা শেষে একদিন ফজরের সময় তিনি মসজিদে নববিতে উপস্থিত হন। নবিজির (সা.) সামনে নিজের ঘটনা তুলে ধরেন। তার ঘটনা শুনে নবিজির (সা.) অন্তর বিগলিত হয়। তিনি তাকে সাদরে গ্রহণ করে নেন। তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘আব্দুল্লাহ’ লকব দেন ‘জুল-বিজাদায়েন’— অর্থাৎ ‘দু’টুকরো কম্বলওয়ালা’। তাকে আশ্রয় দেওয়া হয় আসহাবে সুফফায়, যেখানে তিনি গভীর আগ্রহে কোরআন শিক্ষা করতে থাকেন।
তার কোরআন তিলাওয়াতের ধ্বনি অনেক সময় মুসল্লিদের নামাজের মনোযোগ নষ্ট করতো। একদিন ওমর ফারুক (রা.) এ বিষয়ে অভিযোগ করলে রাসুল (সা.) বলেন, ওকে কিছু বলো না। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য সে সর্বস্ব ত্যাগ করে এসেছে।
আব্দুল্লাহ জুল-বিজাদায়েনের মদিনায় আগমণের কিছুদিন পরই নবিজি (সা.) সাহাবিদের তাবুক অভিযানে বের হওয়ার ঘোষণা দেন। আব্দুল্লাহ (রা.) নবিজির (সা.) কাছে গিয়ে তাবুক অভিযানে অংশগ্রহণের অনুমতি চান। নবিজি (সা.) তাকে গাছের একটি ছাল নিয়ে আসতে বলেন। তিনি গাছের ছাল নিয়ে এলে রাসুল (সা.) সেটি তার হাতে বেঁধে দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, হে আল্লাহ! আমি কাফেরদের জন্য তার রক্ত হারাম করছি। আব্দুল্লাহ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো এটা চাইনি (অর্থাৎ আমি তো শহীদ হতে চাই)। রাসুল (সা.) বললেন, যদি তুমি প্রচন্ড জ্বরে মারা যাও অথবা বাহন থেকে পড়ে মারা যাও, তবুও তুমি শহীদ হিসাবে গণ্য হবে। নবিজির (সা.) এ কথা থেকে বোঝা যায়, শাহাদাতের একান্ত কামনা নিয়ে বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও তিনি শহীদ হিসাবে গণ্য হবেন। তার ভাগ্যে সেটাই ঘটে। তাবুকে পৌঁছে তিনি তীব্র জ্বরে পড়েন এবং কয়েকদিন জ্বরে ভুগে তাবুকেই ইন্তেকাল করেন। (ওয়াকিদি: ৩/১০১৪)
বেলাল ইবনে হারেম মুজানি বলেন, আব্দুল্লাহ জুল-বিজাদায়েন ইন্তেকাল করলে ওই রাতেই তার কাফন-দাফনের কাজ সম্পন্ন হয়। আল্লাহর রাসুলের (সা.) মুয়াজ্জিন বেলাল (রা.) প্রদীপ হাতে ছিলেন। আবু বকর ও ওমর (রা.) তার লাশ বহন করে আনেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে কবরে নামেন এবং বলেন, আপনাদের ভাইকে আমার কাছে নিয়ে আসুন। তাকে কবরে কাত করে শোয়ানোর সময় নবিজি (সা.) বলেন, হে আল্লাহ! আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি তার ওপর সন্তুষ্ট ছিলাম, আপনিও তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।
তার কবরস্থ হওয়ার দৃশ্য দেখে আবু বকর (রা.) বলে ওঠেন, এই কবরের বাসিন্দা যদি আমি হতাম! (আল-ইসাবাহ: ৪৮০৭)
ওএফএফ/এএসএম