শুল্ক নিয়ে আইনি লড়াই এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে গেলো ট্রাম্প প্রশাসন। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দাখিল করা এক আবেদনে আদালতের কাছে দ্রুত রায় দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। সেই সঙ্গে আবেদনে ফেডারেল আইনের আওতায় প্রেসিডেন্ট যাতে বিভিন্ন দেশের ওপর ব্যাপক বাণিজ্যিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন- সেই রায় চাওয়া হয়েছে।
আরও জানা গেছে, আবেদনে মার্কিন সরকার আপিল কোর্টের রায় পাল্টে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আপিল আদালত সম্প্রতি রায় দিয়েছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশিরভাগ শুল্ক জরুরি ক্ষমতা আইনের অপব্যবহার। যদিও আদালত আপাতত শুল্ক কার্যকর রেখেছে, তবুও প্রশাসন দ্রুত সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
মার্কিন সলিসিটর জেনারেল ডি. জন সাওয়ার আদালতকে নভেম্বরের শুরুতেই শুনানি করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, আপিল আদালতের রায় চলমান বৈদেশিক আলোচনার ওপর অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলছে। এর ফলে এরই মধ্যে হওয়া চুক্তির কাঠামো ও চলমান বিভিন্ন আলোচনা বিপদের মুখে পড়েছে।
অন্যদিকে, ছোট ব্যবসাগুলো এই শুল্কের কারণে টিকে থাকার সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছেন লিবার্টি জাস্টিস সেন্টারের আইনজীবীরা। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র কাউন্সেল জেফ্রি শোয়াব বলেন, এই বেআইনি শুল্ক ছোট ব্যবসাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা দ্রুত সমাধান আশা করছি।
ফেডারেল সুপ্রিম কোর্ট ও আপিল আদালত- দুই জায়গাতেই ছোট ব্যবসাগুলো এরই মধ্যে জয়লাভ করেছে। ৭-৪ ভোটে দেওয়া আপিল আদালতের রায়ে বলা হয়, ১৯৭৭ সালের আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (আইইইপিএ) প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দখল করার সুযোগ দেয় না। তবে ভিন্নমত পোষণকারী বিচারকরা বলেছেন, জরুরি পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের হাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের বিস্তৃত ক্ষমতা রয়েছে।
রায়টি মূলত দুটি আমদানি শুল্ককে কেন্দ্র করে- যা ট্রাম্প যথাক্রমে ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে আরোপ করেছিলেন। এসব শুল্ক কানাডা, চীন ও মেক্সিকো থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর প্রযোজ্য।
মার্কিন সংবিধান অনুসারে, শুল্কসহ কর আরোপের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে। তবে দশকজুড়ে আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্টকে বাড়তি ক্ষমতা দিয়েছেন, আর ট্রাম্প সেটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন। তার আরোপিত কিছু শুল্ক- যেমন বিদেশি ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ির ওপর শুল্ক এই রায়ের আওতায় নেই। একইভাবে প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর আরোপ করা শুল্ক, যা পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বজায় রেখেছিলেন, সেটিও বাদ পড়েছে।
এদিকে, ট্রাম্প সরকার বলছে, যদি সুপ্রিম কোর্ট এসব শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করে, তবে এরই মধ্যে যে বিপুল অঙ্কের আমদানি শুল্ক সংগ্রহ করা হয়েছে, তা ফেরত দিতে হতে পারে। এমনটি হলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত পড়বে। এদিকে, শুধু আগস্টের শেষ নাগাদই শুল্ক থেকে মার্কিন সরকারের রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজা ৯০০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।
সূত্র: সিবিসি
এসএএইচ