শেষ হলো ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২৩তম আসর। গত ১১ জানুয়ারি শুরু হয় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই চলচ্চিত্র উৎসব। আজ সমাপনী দিনে উৎসবে পুরস্কার পাওয়া চলচ্চিত্রগুলোর নাম ঘোষণা করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেরার স্মারক।
এবারের উৎসবে চিলড্রেন ফিল্ম সেকশনের বাদল রহমান অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মিখাইল লুকাসেভিস্কি পরিচালিত রাশিয়ান সিনেমা ‘হয়্যার দ্য হোয়াইট ক্রেন্স ড্যান্স’। স্পেশাল অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে জসেলিতো আলটারেজোস নির্মিত ফিলিপাইনস-এর সিনেমা ‘দ্য গার্ডিয়ান অব অনার’। সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত ভারতীয় সিনেমা ‘পদাতিক’ পেয়েছে বেস্ট অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড।
উইম্যান ফিল্মমেকার সেকশনে স্পেশাল মেনশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ক্লাভদিয়া করশুনোভা পরিচালিত ‘মলডোভা’ এবং রাশিয়ার যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘নট জাস্ট অ্যানি ডে’। একই সেকশনের বেস্ট শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মারিয়া ববেভা নির্মিত বুলগেরিয়ার সিনেমা ‘স্কারলেট’। বেস্ট ফিচার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত সিনেমা ফ্রান্সের সারাহ মাল্লেগোলের ‘কুম্ভা’। বেস্ট ডিরেক্টর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে আর্জেন্টিনা ও জার্মানির যৌথ প্রযোজিত ‘আওয়ার ওউন স্যাডো’, পরিচালনা করেছেন অগাস্টিনা জেভিয়ের।
স্পিরিচুয়াল ফিল্ম সেকশনের বেস্ট শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডটি পেয়েছে লুইস কমপোজ পরিচালিত পর্তুগিজ সিনেমা ‘মনটে ক্লেরিগো’। এ বিভাগের স্পেশাল মেনশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে অভিলাষ শর্মা নির্মিত ভারতীয় সিনেমা ‘ইন দ্য নেম অব ফায়ার’ এবং বেস্ট ফিচার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ইভান সসনিন পরিচালিত রাশিয়ান সিনেমা ‘দ্য এলিয়েন’।
বেস্ট ফুল লেন্থ সিনেমার পুরস্কার নেন ‘প্রিয় মালতী’র পরিচালক শঙ্খ দাসগুপ্ত। ছবি: উৎসব কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে
বাংলাদেশ প্যানারমার ট্যালেন্ট সেকশনে পুরস্কার পেয়েছে ৩ সিনেমা। সেকেন্ড রানারআপ মোবারক হোসাইনের ‘পৈত্রিক ভিটা’, ফার্স্ট রানারআপ আসিফ হামিদ পরিচালিত ‘ফুলেরা পোশাক পরে না’ এবং ফিফ্রেসি জুরি প্রদত্ত বেস্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মনন মুনতাকা নির্মিত ‘আ লেজি নুন’ এবং বেস্ট ফুল লেন্থ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে শঙ্খ দাসগুপ্ত পরিচালিত ‘প্রিয় মালতী’।
জাপানি সিনেমা ‘পারফর্মিং কাউরুস ফিউনারেল’-এর জন্য এশিয়ান ফিল্ম কম্পিটিশন সেকশনের বেস্ট স্ক্রিপ্টরাইটার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তাকাতো নিশি ও নরিকো ইউয়াসা। এই শাখায় বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সিনেমাটোগ্রাফার দিলসাত ক্যানান। তার্কিস সিনেমা ‘হোয়েন দ্য ওয়ালনাট লিভস টার্ন ইয়োলো’-এর জন্য তিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন।
বেস্ট অ্যাকট্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন দিমান জানদি তার অভিনীত ইরান এবং তাজাকিস্তানের যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘মেলোডি’র জন্য। বেস্ট অ্যাক্টর অ্যাওয়ার্ডটি জিতে নেন রাইয়ান সার্লেক, তার ইরানী সিনেমা ‘সামার টাইম’-এর জন্য। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ইরানের খ্যাতিমান নির্মাতা মাহমুদ কালারি। এমনকি ছবিটির জন্য বেস্ট ডিরেক্টর হিসেবে স্পেশাল মেনশন অ্যাওয়ার্ডও পান মাহমুদ কালারি। এ ছাড়া চীনা চলচ্চিত্র পরিচালক হাউফেং জু ও জুনফেং জু বেস্ট ডিরেক্টর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তাদের সিনেমা ‘১০০ ইয়ার্ডস’-এর জন্য। এশিয়ান ফিল্ম কম্পিটিশন সেকশনের বেস্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে শকির খলিকোভ পরিচালিত উজবেকিস্তানি সিনেমা ‘সানডে’।
উৎসবের সমাপনী আয়োজনে পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকার ও অতিথিরা। ছবি: উৎসব কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে
সমাপনী আয়োজন
আজ (১৯ জানুয়ারি) রোববার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদের সভাপতিত্বে এই পর্বে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে এবং ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের জন্য একাধিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। উৎসবের জন্য স্থায়ী ভেন্যু, নির্দিষ্ট বাজেট এবং বছরব্যাপী এমন কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেন ফারুকী। সাংস্কৃতি পর্বে নৃত্য পরিবেশন করে নাচের দল জলতরঙ্গ। সমাপনী প্রদর্শনী হিসেবে দেখানো হয় ইকবাল এইচ চৌধুরী পরিচালিত সিনেমা ‘বলী’। তার পরই ঘোষণা করা হয় পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্রের নাম।
‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগান নিয়ে গত ১১ জানুয়ারি শুরু হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এ বছর উৎসবে দেখানো হয় ৭৫ দেশের ২০৩টি চলচ্চিত্র। রাজধানীর ৬টি ভেন্যুতে নয় দিনব্যাপী আয়োজিত এ উৎসবে অংশ নেন ৪৪ জন বিদেশি প্রতিনিধি।
চীন ও বাংলাদেশের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক উদ্যাপনের লক্ষ্যে এ বছর উৎসবের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সেকশনটি চীনা চলচ্চিত্রের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনের করিডোরে চীনা সিনেমার পোস্টারের বিশেষ প্রদর্শনী করা হয়।
বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও উৎসবে ছিল মাস্টারক্লাস ও উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে রাখা হয়েছিল বিশেষ চলচ্চিত্র ও চিত্রকর্ম প্রদর্শনীও। বিশেষ আকর্ষণ ছিল প্রখ্যাত রাশিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক আলেক্সেই ফেদোরচেনকোর রেট্রোস্পেকটিভ।
আরএমডি