যেদিন নবিজির (সা.) ঘুম ভেঙেছিল সূর্য ওঠার পর

2 hours ago 3

আবু কাতাদাহ (রা.) বলেন, একদিন (যুদ্ধ থেকে ফেরার সময়) আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের সামনে বক্তৃতা করলেন। তিনি বললেন, আজকে বিকাল থেকে সারারাত আপনাদের পথ চলতে হবে এবং ইনশাআল্লাহ আগামীকাল সকালে আমরা পানির কাছে উপস্থিত হবো। নবিজির (সা.) নির্দেশনা শুনে সাহাবিরা ওই জায়গা থেকে দ্রুত যাত্রা করলেন। নবিজিও (সা.) যাত্রা করলেন। আমি নবিজির (সা.) পাশে পাশে চলছিলাম।

চলতে চলতে যখন রাত্রি দ্বিপ্রহর, তখন নবিজি (সা.) সওয়ারির ওপর বসে ঝিমুচ্ছিলেন। ঘুমের প্রভাবে এক সময় তিনি তার সওয়ারির একদিকে ঝুঁকে পড়লেন। আমি তার কাছে গিয়ে না জাগিয়েই তাকে ঠেলে ধরলাম যেন তিনি পড়ে না যান। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সওয়ারির উপর সোজা হয়ে বসলেন। এরপর আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চলতে থাকলেন এবং এ অবস্থায় রাতের বেশির ভাগ অতিক্রান্ত হয়ে গেলো। এক সময় তিনি আবার সওয়ারির একদিকে ঝুঁকে পড়লেন। তখন আবার আমি তাকে না জাগিয়ে ঠেলে ধরলাম এবং তিনি সওয়ারির ওপর সোজা হয়ে বসলেন।

রাত ভোর হয়ে এলে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম দুবারের চেয়েও বেশি একদিকে ঝুঁকে পড়লেন। তিনি পড়েই যাচ্ছিলেন প্রায়। তখন আমি আবার তাকে ধরলাম। এবার নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা উঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম, আবু কতাদাহ। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার জিজ্ঞেস করলেন, এভাবে আপনি আমার পাশে পাশে কতক্ষণ ধরে চলছেন? আমি বললাম, আমি রাতের প্রথম থেকেই এভাবে আপনার সাথে চলছি। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন যেভাবে আপনি তার নবিকে দেখাশোনা করেছেন।

তারপর নবিজি (সা.) বললেন, আপনি কি কাউকে দেখতে পাচ্ছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ, এই তো একজন আরোহী। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে সাতজন আরোহী চলে এলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাস্তা থেকে কিছু দূরে সরে গিয়ে মাটিতে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন এবং আমাদের বললেন, আপনারা নামাজের খেয়াল রাখবেন।

কিন্তু আমরা সবাই সূর্য উঠে যাওয়া পর্যন্ত ঘুমালাম। নবিজিই (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম জেগে উঠলেন আর তখন সূর্যের আলো তার পিঠের ওপর এসে পড়ছিল। এরপর আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠে পড়লাম। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আপনারা সবাই যার যার সওয়ারিতে সওয়ার হোন। তার নির্দেশ অনুযায়ী আমরা সওয়ারিতে চেপে যাত্রা করলাম। সূর্য বেশ কিছু ওপরে উঠলে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সওয়ারি থেকে অবতরণ করে আমার কাছে অল্প পানিসহ যে ওযুর পাত্র ছিল তা চেয়ে নিলেন এবং অন্য সময়ের চেয়ে দ্রুত অজু করলেন।

তারপর বেলাল (রা.) নামাজের আজান দিলে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথমে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করলেন এবং তারপর প্রতিদিনের মতো করে ফজরের ফরজ নামাজ আদায় করলেন। তারপর তিনি সওয়ারিতে আরোহণ করলে আমরাও সওয়ারিতে আরোহণ করে তার সাথে রওয়ানা হলাম। এ সময় আমরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলাম যে, আমরা নামাজের ব্যাপারে যে অবহেলা দেখালাম তার কাফফারা বা ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে?

নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কথা শুনে বললেন আমার জীবন ও কাজ-কর্ম কি আপনাদের জন্য অনুসরণীয় ও আদর্শ নয়? ঘুমানোতে কোন দোষ বা অবহেলা নেই। অবহেলা এ রকম ব্যক্তির ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে (জেগে থেকেও ইচ্ছাকৃত) নামাজ না আদায় করে দেরি করে এবং অন্য নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যায়। ঘুমের কারণে এভাবে কারো নামাজ ছুটে গেলে সে যখন জাগ্রত হবে, তখনই যেন নামাজ আদায় করে নেয়। আর পরদিন সকালে যেন সে সময়মত নামাজ আদায় করে।

সূত্র: সহিহ মুসলিম: ১৪৪৮

ওএফএফ/জিকেএস

Read Entire Article