যেসব কারণে আপনার শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে যেতে পারে

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর নতুন সার্ভেইলেন্স রিপোর্টে দেখা গেছে, দেশের আইসিইউ–তে ভর্তি রোগীদের ৪১ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না। এটি আমাদের জন্য বড় সতর্কবার্তা। অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধ (এএমআর) বাড়ছে এবং ভুল ব্যবহারের ফলে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। চলুন জানি, কী কারণে এটি ঘটে। ১. অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার অনেকে ডাক্তার না দেখিয়েই ওষুধের দোকানদারের পরামর্শে বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কেনেন। যেমন ঠান্ডা, সর্দি, ভাইরাসজনিত জ্বর। এই ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। কিন্তু ভুল ওষুধ খওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যানসার রিসার্চ-এর ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন বিনা প্রেসক্রিপশন‑এ। ২. নির্দেশিকা মানা না অনেকে ওষুধের কোর্স শুরু করার পর উপসর্গ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেন। এতে সংক্রমণ পুরোপুরি নিরাময় হয় না এবং বেঁচে থাকা ব্যাকটেরিয়া আরও শক্তিশালী হয়ে যায়। তাই সবসময় ডাক্তারের নির্দেশ অনুসারে পুরো কোর্স শেষ করা উচিত

যেসব কারণে আপনার শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে যেতে পারে

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর নতুন সার্ভেইলেন্স রিপোর্টে দেখা গেছে, দেশের আইসিইউ–তে ভর্তি রোগীদের ৪১ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না। এটি আমাদের জন্য বড় সতর্কবার্তা।

অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধ (এএমআর) বাড়ছে এবং ভুল ব্যবহারের ফলে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। চলুন জানি, কী কারণে এটি ঘটে।

যেসব কারণে আপনার শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে যেতে পারে

১. অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার

অনেকে ডাক্তার না দেখিয়েই ওষুধের দোকানদারের পরামর্শে বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কেনেন। যেমন ঠান্ডা, সর্দি, ভাইরাসজনিত জ্বর। এই ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। কিন্তু ভুল ওষুধ খওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।

এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যানসার রিসার্চ-এর ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন বিনা প্রেসক্রিপশন‑এ।

যেসব কারণে আপনার শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে যেতে পারে

২. নির্দেশিকা মানা না

অনেকে ওষুধের কোর্স শুরু করার পর উপসর্গ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেন। এতে সংক্রমণ পুরোপুরি নিরাময় হয় না এবং বেঁচে থাকা ব্যাকটেরিয়া আরও শক্তিশালী হয়ে যায়। তাই সবসময় ডাক্তারের নির্দেশ অনুসারে পুরো কোর্স শেষ করা উচিত।

যেসব কারণে আপনার শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে যেতে পারে

৩. অদক্ষ ডাক্তার বা ভুল পরামর্শ

২০২২ সালে প্রকাশিত স্প্রিঙ্গার নেচার লিংক-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে - প্রশিক্ষিত নন এমন স্বাস্থ্যকর্মী বা দোকানি প্রায়ই রোগীর উপসর্গ দেখে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেন। এর ফলে রোগ নিরাময় ঠিকভাবে হয় না এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স বাড়ে।

৪. খাবারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা কমে যাওয়া

এমনকি কিছু খাবার ও পানীয় অ্যান্টিবায়োটিক শোষণ বা কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন -

>> দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার: ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের শোষণ কমিয়ে দেয়।

>> অতিরিক্ত চা বা কফি: অতিরিক্ত চা কফি রক্তে ওষুধের মাত্রা কমাতে পারে।

>> আলকোহল: আলকোহল শরীরে ঢুকলে লিভারকে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে ফেলে। লিভার তখন অগ্রাধিকার দিয়ে প্রথমে আলকোহল ভাঙতে ব্যস্ত হয়ে যায়। ফলে একই সময়ে যদি অ্যান্টিবায়োটিকও নিতে হয়, লিভার ওষুধটিকে খুব দ্রুত ভেঙে ফেলে বা সঠিকভাবে সক্রিয় করতে পারে না। ফলে, অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমে যায় - রক্তে ওষুধের প্রয়োজনীয় মাত্রা ওঠে না, সংক্রমণ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আসে না। এমনকি এ কারণে ব্যাকটেরিয়া আরও শক্তিশালী হয়ে ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।

যেসব কারণে আপনার শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে যেতে পারে

৫. অপ্রয়োজনীয় পুরনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার

চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর অব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক সংরক্ষণ করে পরে ব্যবহার করা স্বাভাবিক কাজ নয়। পুরনো বা সঠিকভাবে সংরক্ষিত নয় এমন ওষুধ কার্যকর হয় না এবং সংক্রমণ পুরোপুরি সারায় না।

৬. পশুখাদ্য ও হরমোন থেরাপি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালের একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, যারা অ্যান্টিবায়োটিক বা হরমোন দিয়ে পালন করা পশুর খাদ্য বেশি খায়, তাদের শরীরে এএমআর-এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। অর্থাৎ, আমাদের খাবারেও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা আছে।

যেসব কারণে আপনার শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে যেতে পারে

৭. সচেতনতার অভাব

অনেক মানুষ রেজিসট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ে সচেতন নয়। এতে চিকিৎসার ফলাফল কমে যায় এবং সংক্রমণ আরও বিপজ্জনক হয়। তাই পরিবার ও সমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিই একমাত্র সমাধান।

রেজিসট্যান্স প্রতিরোধে কী করবেন

>> ডাক্তার পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন।

>> পুরো কোর্স শেষ করুন।

>> প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ ব্যবহার করবেন না।

>> খাবারে সতর্ক থাকুন এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিন।

>> পরিবার ও সমাজের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিন।

সূত্র: আইইডিসিআর, এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যানসার রিসার্চ, জার্নালস.এলডব্লিউডব্লিউ.কম, পাবমেড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

এএমপি/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow