যৌতুক এবং যৌতুকের কারণে সাধারণ জখমের শিকার নারীদের মামলায় বাধ্যতামূলক মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা ন্যায়বিচারে বাধা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীরা।
তারা সতর্ক করেছেন, এই বিধান নারীকে বিচার চাইবার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করবে এবং অপরাধীদের অপরাধ করার সুযোগ বাড়াতে পারে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই আশঙ্কার কথা জানান।
সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে ও লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহার সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (অব.) এবং আইন বিশ্লেষক ফউজুল আজিম।
সভায় বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা বিচার চাইবার ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে এবং এটি সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, যৌতুক ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও নতুন অধ্যাদেশে মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা যুক্ত হওয়ায় নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এটি এক ধরনের পিছিয়ে যাওয়া।
আইন বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, এই অধ্যাদেশ নারীদের ন্যায়বিচারের পথ সংকুচিত করবে, মামলার আলামত নষ্ট হতে পারে এবং অপরাধীদের অপরাধ করার প্রবণতা বাড়াতে পারে। তারা মনে করেন, স্বাধীন দেশে মামলা দায়েরের আগে কোনো বিচারপ্রার্থীকে মধ্যস্থতার জন্য বাধ্য করা উচিত নয়।
মুক্ত আলোচনায় মানবাধিকার সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, হেনস্তা ও হয়রানির ভয়ে অনেক নারী মামলা করতে ভয় পান। বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা সংক্রান্ত বিধান এই পরিস্থিতি আরও জটিল করবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, ২০২৫ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী, যৌতুক ও সাধারণ জখমের মামলায় বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা নারীর ন্যায়বিচারে প্রাপ্যতা কমিয়ে দেবে।
সভায় ব্র্যাক, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, নারীপক্ষ, নারী প্রগতি সংঘ, আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং সাংবাদিকরা অংশ নেন।
জেপিআই/ইএ