রঙিন কাগজে মোড়ানো অসুস্থ গণতন্ত্রের বিকল্প!

অনেক বছর ধরে মনে হচ্ছিল হেরে গেল সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা, পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থাই বিশ্বব্যাপী মানুষ গ্রহণ করে নিয়েছে। যারা সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছেন, তাদের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে এসেছে। আমাদের আশেপাশেই সেই উদাহরণ আছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি শক্তিশালী সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা রাজ্য এখন গণতন্ত্রের শুষ্ক ওলান চাটছে। বাংলাদেশে রঙিন পাঞ্জাবি গায়ে সমাজতন্ত্রের প্রবক্তাদের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে গেছে। সবার অবচেতনেই প্রবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু না, একটু ধৈর্য ধরুন। হিসাব-নিকাশ বাকি আছে এখনো। অতি সাম্প্রতিক ঘটনাবলির দিকে তাকালে নতুন বাস্তবতা চোখে পড়বে। আশা জেগে উঠবে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ ধারণ করা মানুষদের মাঝে। কারণ, ধোলাই করা কোর্ট-প্যান্ট-টাইয়ের নিচে লুকিয়ে থাকা পুঁজিবাদের দগদগে ঘা বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ফুটে উঠছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বিশ্বব্যাপী, কোথাও ধীরে, কোথাও দ্রুত। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাটিক স্যোসালিস্ট জোহরান মামদানীর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হওয়া, চিনের বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ছড়িয়ে পড়া, যুক্তরাষ্ট্রে শ্রেণি বৈষম্য দিনে দিনে প্রকট থেকে প্

রঙিন কাগজে মোড়ানো অসুস্থ গণতন্ত্রের বিকল্প!

অনেক বছর ধরে মনে হচ্ছিল হেরে গেল সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা, পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থাই বিশ্বব্যাপী মানুষ গ্রহণ করে নিয়েছে। যারা সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছেন, তাদের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে এসেছে। আমাদের আশেপাশেই সেই উদাহরণ আছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি শক্তিশালী সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা রাজ্য এখন গণতন্ত্রের শুষ্ক ওলান চাটছে। বাংলাদেশে রঙিন পাঞ্জাবি গায়ে সমাজতন্ত্রের প্রবক্তাদের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে গেছে। সবার অবচেতনেই প্রবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু না, একটু ধৈর্য ধরুন। হিসাব-নিকাশ বাকি আছে এখনো।

অতি সাম্প্রতিক ঘটনাবলির দিকে তাকালে নতুন বাস্তবতা চোখে পড়বে। আশা জেগে উঠবে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ ধারণ করা মানুষদের মাঝে। কারণ, ধোলাই করা কোর্ট-প্যান্ট-টাইয়ের নিচে লুকিয়ে থাকা পুঁজিবাদের দগদগে ঘা বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ফুটে উঠছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বিশ্বব্যাপী, কোথাও ধীরে, কোথাও দ্রুত। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাটিক স্যোসালিস্ট জোহরান মামদানীর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হওয়া, চিনের বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ছড়িয়ে পড়া, যুক্তরাষ্ট্রে শ্রেণি বৈষম্য দিনে দিনে প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে পড়া এবং ইউরোপে শ্রমিকের যত্ন কমে যাওয়া বিশ্বের কাছে নতুন বার্তা দিচ্ছে। কী সেই বার্তা?

একটি রিফর্মড সমাজতন্ত্র? মানুষ যদি তথাকথিত গণতন্ত্র থেকে, ভাওতাবাজির গণতন্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে সামনে বিকল্প থাকে সমাজতান্ত্রিক পথ। সেই অসফল, ব্যর্থ সমাজতন্ত্র না। একটি রিফর্মড সমাজতন্ত্র, যা ইতোমধ্যে সফলতার কাহিনী তৈরি করছে।

যে চিনের জনগণ একসময় দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল সমাজতন্ত্রের আতঙ্কে, তারাই এখন দেশে ফিরে আসছে। চিনের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষিত পেশাজীবীরা দলে দলে ঘরে ফিরছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের জিন ছেড়ে ফিরছে চিনে তাদের পেশা ও জীবনের বেটারমেন্টের জন্য। যদিও এ বছর চিনে ফরেইন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ১০ শতাংশ কমেছে, তথাপি ২০২৫ সালেই ১৮ হাজার ৮৩২ টি বিদেশি কোম্পানি চিনে ইনভেস্টমেন্টের জন্য নাম লিখিয়েছে!

পুঁজিবাদের দগদগে ঘায়ের কথাটাই আগে বলি। আমার কথা না, খোদ পশ্চিমা বিখ্যাত এনজিও অক্সফ্যামের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ এবং পুঁজিবাদের প্রধান রক্ষক যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ শতাংশ মানুষ আক্ষরিক অর্থে দরিদ্র এবং স্বল্প আয়ে জীবনযাপন করে। আমেরিকার ৪৮.৯ শতাংশ শিশু এমন দরিদ্র ঘরে বড় হয়ে উঠছে যেসব পরিবার তাদের নিত্য প্রয়োজন মেটাতে পারে না। এই যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে ৪৯. ৯ শতাংশ স্টক মার্কেট।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট জানিয়েছে, বিশ্বের ১০টি প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যের হার সর্বাধিক। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার প্রকাশনা ‘রিভারসাইড’ তুলে ধরেছে, যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের মৃত্যুর চতুর্থ বৃহৎ কারণ অর্থের অভাব। অর্থনৈতিক বৈষম্য কতটা প্রকট তা উঠে এসেছে অক্সফ্যামের হিসাবেই।

গত বছর ১০ জন ধনী ২০২৩ সালে আয় করেছেন ৭০০ বিলিয়ন ডলার। দশজন সাধারণ মানুষ কাজ করে যদি প্রতি মাসে ৫ হাজার ডলার আয় করেন, তাহলে তার ওই ৭০০ বিলিয়ন ডলার তুলতে কয়েক লক্ষ বছর সময় লাগবে! শুধু তাই নয়, পুঁজিবাদী দেশগুলোতে সম্পদের সিংহভাগ ০.০০০১ শতাংশ মানুষের হাতে বন্দী! এ হিসাব আমরা জানতে পারি না। টেলিভিশনসহ প্রচারমাধ্যমগুলো চকচকে পোশাকের মানুষ, বড়বড় চকচকে বিল্ডিং আমাদের মত হতদরিদ্র দেশের জনগণের সামনে তুলে ধরে। সুখের গল্প শোনায়!

এই চরম বৈষম্য ও বাস্তবতার বিরুদ্ধেই ছিল কার্ল মার্ক্সের বার্তা। দেড়শ বছর আগেই তিনি দেখেছিলেন এই বাস্তবতা। মোটা দাগে আমরা জানি, পুঁজিবাদ হল মালিক শ্রেণির উৎপাদন এবং শিল্পের উপর তার একচ্ছত্র আধিপত্য। প্রলেতারিয়েত বা কায়িক শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নাই, তারা শ্রম দিয়ে পেটে ভাতে বেঁচে থাকবে, অর্থাৎ স্রেফ তারা শ্রম বিক্রি করবে।

সমাজতন্ত্র অথবা কমিউনিজম এই ব্যবস্থার ঘোর বিরোধী। মার্ক্সের মতে বর্তমান মানব সমাজ হল পুঁজিবাদপ্রবণ এবং পুঁজিবাদের ধারণাই হল স্বল্পসংখ্যক মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করা, সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করা। তাই শ্রেণি সংগ্রামই হল এর একমাত্র প্রতিকার। এই কারণেই পশ্চিমের দেশগুলো শুরু থেকেই সমাজতন্ত্রফোবিয়ায় আক্রান্ত। সমাজতন্ত্র শব্দটি শুনলেই তাদের গায়ে অ্যালার্জি দেখা দেয়।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠাই মূলত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুঁজিবাদবিরোধী রাষ্ট্র ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল। একেবারে শুরু থেকেই পশ্চিমা বিশ্ব, অর্থাৎ পুঁজিবাদে বিশ্বাসী দেশগুলো এই ধারণাকে গ্রহণ করেনি। বরং তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছে যে করেই হোক প্রতিহত করতে হবে এই ব্যবস্থাকে। গত ১০০ বছরে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং পুঁজিবাদীরা তা প্রতিহত করতে গিয়ে যে সংঘাত, যে যুদ্ধ-বিগ্রহ, যে বিশ^ রাজনৈতিক টানাপোড়েন, বিশ্বব্যাপী শতশত দেশপ্রেমী রাজনীতিক জীবন দিল, লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ প্রাণ দিল এবং এখনো দিচ্ছে- এই সংঘাতে শেষ পর্যন্ত কার জয় হবে? ৮০০ কোটি মানুষ অবশেষে কোনো অর্থনৈতিক চিন্তায় শামিল হবে? এই প্রশ্নগুলো উঠে আসতে শুরু করছে।

সমাজতন্ত্র এবং কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেসিক কিছু ত্রুটি ছিল। কমিউনিজমের সূতিকাগার সোভিয়েত ইউনিয়ন সাধারণ মানুষের কল্যাণ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষেরই মতামতের কোনো গুরুত্ব দেয়নি। শিল্প এবং ব্যবসায়কে এত বেশি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে যে মানুষ তা গ্রহণ করতে পারেনি। অন্যদিকে কৃষি, শিল্প ও কমিন্টার্ন পলিসিতে এত এত ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে রাষ্ট্রই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে, ফলে জন মানুষের জীবন মান বৃদ্ধিতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিণতি হিসাবে ভেঙে গেল সোভিয়েত ইউনিয়ন, সেই সঙ্গে ছোট ছোট কয়েকটি দেশ সমাজতান্ত্রিক ধারণা থেকে বের হয়ে গণতন্ত্রের পায়ে পড়ল। আর সমাজতন্ত্রে এই ব্যর্থতার পেছনে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখল যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। পশ্চিমের পুঁজিবাদী দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব প্রচারমাধ্যম। তারা সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সত্যের সঙ্গে মিথ্যাচার মিশিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালিয়ে আসছে।

দ্বিতীয় আরেকটি হাতিয়ার হিসাবে তারা ব্যবহার করে আসছে ধর্মগুলোকে। বিশ্বের সব বড় বড় ধর্মগুরুর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর গোয়েন্দাসংস্থা নিবিড় সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে, যার যেটার প্রতি আকর্ষণ সেটা তুলে দেয় ডেরায়। অধিকাংশ দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশেষ পাহারা বসিয়ে রাখে। সর্বোপরি, শ্রমিকের জীবনমান হিসাব নিকাশ করে এমন একটা পর্যায়ে রাখে, যাতে তারা ডেসপারেট হয়ে না ওঠে এবং সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে না পড়ে। মানুষকে প্রলোভিত করা হয় মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকারের চটকদারি অফারের মাধ্যমে। কথা সত্য এসবের অভাব ছিল সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে।

কিন্তু সময় পাল্টাতে শুরু করেছে। একদিকে গণতন্ত্রের দীর্ঘদিনের চর্চায় দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক চরম বৈষম্য, অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি যে মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারে, দেশকে উন্নত করতে পারে এবং জীবন মানবদলে দিতে পারে তা সংস্কারের মধ্য দিয়ে করে দেখালো বিশ্বের এখনকার সবচেয়ে বৃহৎ কমিউনিস্ট দেশ চিন।

যে চিনের জনগণ একসময় দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল সমাজতন্ত্রের আতঙ্কে, তারাই এখন দেশে ফিরে আসছে। চিনের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষিত পেশাজীবীরা দলে দলে ঘরে ফিরছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের জিন ছেড়ে ফিরছে চিনে তাদের পেশা ও জীবনের বেটারমেন্টের জন্য। যদিও এ বছর চিনে ফরেইন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ১০ শতাংশ কমেছে, তথাপি ২০২৫ সালেই ১৮ হাজার ৮৩২ টি বিদেশি কোম্পানি চিনে ইনভেস্টমেন্টের জন্য নাম লিখিয়েছে!

গত ১৫ বছরে চিন শুধু বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর অর্থনীতিই নয়, দ্রুত গতিতে ধাবিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলতে। ১৫-২০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি যখন ছিল ২০ ট্রিলিয়ন ডলার, তখন চিনের ছিল মাত্র ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এখন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি যখন ২৭ ট্রিলিয়ন ডলার, তখন চিনের ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থনীতিবিদরা হিসাব করছেন, আগামী ৮ বছরে চিনের জিডিপি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে।
এটি সম্ভব হয়েছে দেং জিয়াও পিঙের সংস্কারকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিং পিঙের সফল করার মধ্য দিয়ে। চিন একদিকে মুক্তবাজার অর্থনীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ চিনাদের জীবনযাত্রাকে করেছে চোখে পড়ার মত উন্নত। চিনে বর্তমানে রয়েছে ১১০০ এর অধিক বিলিয়নিয়ার। কিন্তু চিনের চেহারাটা এমন নয় যে অন্য মানুষদের রাস্তায় ফেলে রেখে বিলিয়নিয়াররাই উপরে উঠে যাবে। সে সুযোগ চিনে নেই। তাই আজ সমাজতন্ত্রের নতুন মডেলে পরিণত হয়েছে দেশটি। অদূর ভবিষ্যতে বহু দেশ যে চিনের এই পলিসিতে যোগ দিতে চাইবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

লেখক: সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক।

এইচআর/এএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow