আশ্বিনের বাতাসে বইছে শারদীয়ার মিষ্টি গন্ধ। সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা চলছে। দুর্গাপূজাকে ঘিরে দেশজুড়ে মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রঙিন সাজে সেজেছে রাজধানীর রমনা কালী মন্দিরও।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রমনা কালী মন্দির প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ, প্রতিমায় লাগছে রং তুলির আঁচড়, আলোকসজ্জা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সব মিলিয়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
বাংলা একাডেমির সড়ক সংলগ্ন মন্দিরের গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পরে বাঁশের স্তূপ। প্রধান সড়ক থেকে মন্দিরের প্রধান ফটক পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে চলছে বাঁশ কাঠ বাধার কাজ। এরপর শুরু হবে আলোকসজ্জার কাজ। অনেকে আবার মন্দিরের সামনে রাস্তার দুই পাশে স্টলের কাজে পার করছেন ব্যস্ত সময়।
প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে যেতেই সেখানেও দেখা মেলে বাঁশ কাঠ দিয়ে প্যন্ডেল নির্মাণে ব্যস্ত শ্রমিকদের। অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে একটি মঞ্চও। বাঁশ-কাঠ দিয়ে নির্মাণাধীন প্যন্ডেলের ওপরে তাবু টাঙানোর কাজ করছেন সাজসজ্জা সংশ্লিষ্ট নির্মাণ শ্রমিকরা। নিচেই রেখে দেওয়া হয়েছে রঙ্গিন প্রতিমা। ঠিক তারপাশেই রয়েছে প্যান্ডেলের কাজে ব্যবহারের জন্য রঙ্গিন কাপড়।
ডেকোরেশন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক জাহাঙ্গীর বলেন, হাতে সময় বেশি নেই। আজ আর কালকের দিনটা আছে মাত্র। আশা করছি আজকে রাতের মধ্যে ডেকোরেশনের কাজ শেষ করে ফেলতে পারবো। আগামীকাল লাইটিংয়ের কাজ শুরু করবো। কালই রাতের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
এছাড়াও মন্দির প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে, মন্দিরের পেছনেও রাখা হয়েছে নির্মাণাধীন প্রতিমা যাতে এখনও রঙ ও সাজসজ্জার কাজ বাকি। এগুলো মূলত অর্ডারের। রাজধানীর বিভিন্ন মন্দিরে এসব পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমা কারিগররা। অর্ধ প্রস্তুতকৃত প্রতিমাগুলোতে রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গা, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিকের রূপ। দম ফেলারও যেন ফুসরত নেই তাদের।
রমনা কালী মন্দিরের প্রতিমা শ্রমিক বিবেকানন্দ পাল বলেন, এখন শেষ মুহুর্তে কাজের প্রচুর চাপ। কাজও প্রায় শেষের দিকে। অল্প কিছু কাজ বাকি আছে।
আরও পড়ুন:
দুর্গাপূজায় কঠোর নিরাপত্তা, গুজব প্রতিরোধে ‘তাৎক্ষণিক অ্যাকশন’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা পূজা হয়ে উঠুক উৎসবমুখর
পূজার নিরাপত্তায় দুই লাখ আনসার, ‘অ্যাপসে’ হবে নজরদারি
তিনি বলেন, এবার ঢাকায় ৯টা প্রতিমার কাজ করছি। এর মধ্যে একটা এই (রমনা) মন্দিরের জন্য। বাকি ৮টা অর্ডারের। প্রায় অধিকাংশ প্রতিমার কাজ শেষ। অল্প কিছু রঙের কাজ আর সাজসজ্জার কাজ বাকি আছে। আগামীকাল দুপুর ১২টার মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। তারপর কাল দুপুরে অর্ডারের প্রতিমাগুলো সবাই নিতে আসবে।
এদিকে, পূজা শুরুর দুদিন বাকি থাকলেও এরই মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে মন্দির প্রাঙ্গণে। শুরু হয়েছে দর্শনার্থীদের আনাগোনা।
দর্শনার্থীরা বলছেন, মহালয়া উৎসবের মধ্য দিয়ে আগমন ঘটে শারদীয় দুর্গা উৎসবের। সনাতনীদের ঘরে ঘরে শুরু হয় উৎসবের আমেজ।
রমনা মন্দিরে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মৃণাল বলেন, মহালয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আগমন ঘটে দেবী দুর্গার। আর প্রতিমায় রং-তুলির আঁচড় পরতেই ঘরে ঘরে শুরু হয় দুর্গা পূজার আমেজ। রঙের কাজ শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর একপাক মন্দিরে আসা হয়। কিন্তু আজ ছুটির দিন হওয়ায় সকাল সকাল ছেলে মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে মন্দিরে এসেছি।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
শাস্ত্রীয় মতে, এবার মা দুর্গা হাতির পিঠে চড়ে মর্ত্যে আসছেন এবং দোলায় চড়ে কৈলাসে গমন করবেন।
এদিকে, শারদীয় দুর্গোৎসবের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর। তিনি জানান, সারাদেশে এবছর দুর্গাপূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এরমধ্যে ঢাকা মহানগরীর ২৫৮টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর ঢাকা মহানগর এলাকায় গতবছর ২৫২টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা হয়।
এ বছর অন্তর্বর্তী সরকার দুর্গাপূজার জন্য সব মিলিয়ে ৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। এর মধ্যে সারাদেশের জন্য ৪ কোটি টাকা এবং পার্বত্য জেলারগুলোর জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও জানিয়েছেন।
কেআর/এসএনআর/এমএস