অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে বাধ্যতামূলক ডিজিটাল আইডি চালু করছে যুক্তরাজ্য

1 hour ago 4

অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের চাপের মুখে দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক ডিজিটাল আইডি চালুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন এ ব্যবস্থায় ব্রিটিশ নাগরিক ও বৈধ বাসিন্দাদের ডিজিটাল আইডি মোবাইল ফোনে সংরক্ষিত থাকবে। যদিও কাউকে আইডি সঙ্গে বহন করতে হবে না বা তা দেখানোর জন্য বাধ্যও করা হবে না, তবে কর্মীদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক হবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যে পরিচয়পত্র ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি জাতীয় পরিচয়পত্র চালুর বিষয়টি এড়িয়ে চললেও, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকার অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে ক্রমবর্ধমান জনতাবাদী চাপের মুখে পড়েছে।

ফ্রি ডিজিটাল আইডিতে ব্যক্তির নাম, জন্মতারিখ, ছবি ছাড়াও জাতীয়তা ও বসবাসের তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কাজের অধিকারের প্রমাণ হিসেবে এটি বাধ্যতামূলক হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর ফলে যারা যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে অবস্থান করছে, তারা আর চাকরি পাবে না। অর্থ উপার্জনের সুযোগই অবৈধ অভিবাসীদের অন্যতম প্রধান প্রলোভন। এই ব্যবস্থা সেই সুযোগ বন্ধ করবে।

ডিজিটাল আইডি ব্যবস্থার মাধ্যমে গাড়ির লাইসেন্স, শিশু যত্ন, কল্যাণভাতা ও কর-সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ আরও সহজ হবে বলেও জানিয়েছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেন, ডিজিটাল আইডি যুক্তরাজ্যের জন্য বিশাল সুযোগ। এটি নাগরিকদের অসংখ্য সুবিধা দেবে। একই সঙ্গে অবৈধভাবে কাজ করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে, যা আমাদের সীমান্তকে আরও সুরক্ষিত করবে।

তবে পরিকল্পনাটি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। মধ্যপন্থী লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা বলেছে, নাগরিকদের “প্রতিদিনের জীবনে বেসরকারি তথ্য জমা দিতে বাধ্য করা হবে” এমন কোনো ডিজিটাল আইডি তারা সমর্থন করবে না।

অন্যদিকে বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি বাদেনোখ এক্সে লিখেছেন, তার দল সরকার বা অন্য কারও বাধ্যতামূলক আইডি কার্ড চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা প্রতিহত করবে। তিনি আরও বলেন, আমরা এমন কোনো ব্যবস্থা সমর্থন করব না, যা ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক হবে বা যারা এটি ব্যবহার করতে চান না তাদের নাগরিক অধিকারের বাইরে রাখবে।

ডানপন্থি রিফর্ম ইউকে পার্টি এ পরিকল্পনাকে ‘নির্বাচনী কৌশল’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি কেবল ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। তাদের দাবি, এটি অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে কোনো কাজ করবে না, বরং সাধারণ নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ ও শাস্তি দিতে ব্যবহার করা হবে। দলটির নেতা নাইজেল ফারাজ বলেন, ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থা থাকলেও ব্রিটিশরা ঐতিহাসিকভাবে এমন উদ্যোগকে সন্দেহের চোখে দেখে এসেছে।

২০০০-এর দশকে টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে লেবার পার্টি পরিচয়পত্র চালুর চেষ্টা করেছিল। তবে তার উত্তরসূরি গর্ডন ব্রাউন এ পরিকল্পনা বাতিল করেন, কারণ বিরোধীরা এটিকে নাগরিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেছিল।

কিন্তু বর্তমান জনতাবাদী আবহে সরকার মনে করছে, অভিবাসনবিষয়ক উদ্বেগ আগের আপত্তিগুলোকে ছাপিয়ে যাবে। লেবার পার্টির বার্ষিক সম্মেলনের প্রাক্কালে এই ঘোষণা আসা একেবারেই কাকতালীয় নয়।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত পরিচয়পত্র না চালুর দাবিতে ৫ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ অনলাইন আবেদনপত্রে সই করলেও সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষ এ পদক্ষেপের পক্ষে।

সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা

এসএএইচ

Read Entire Article