রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে লড়ছেন একমাত্র নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক।
আসন্ন রাকসু নির্বাচন সামনে রেখে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রার্থী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজশাহী প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন।
জাগো নিউজ: নারী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
তাসিন খান: নির্বাচন করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে, নারী হিসেবে না। রাকসু নির্বাচনের ৬৩ বছরের ইতিহাসে আমিই প্রথম নারী প্রার্থী। এটিতে সাড়া পড়েছে নির্বাচনে। আমার বন্ধুবান্ধব, বড় ভাই-ছোট ভাইদের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। তাদের অনুপ্রেরণায় আমার এগিয়ে যাওয়া।
জাগো নিউজ: নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা কম কেন?
তাসিন খান: নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই হতাশাজনক। এর কারণ হচ্ছে, প্রশাসন বারবার বলেছিল তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। অনেকেই আশঙ্কা থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। সেই জায়গা থেকে আমি অংশগ্রহণ করেছি, সেটাই মুখ্য বিষয়। আমি গত জুলাই আন্দোলনে একজন সমন্বয়ক হিসেবে ছিলাম। সমন্বয়ক পরিষদে যখন আমার নামটা লেখাই, আমার জীবনটা সম্পূর্ণ দেশের জন্য রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি। সেই জায়গা থেকে আমার কাছে ভয়গুলো অনেক ছোট মনে হয়েছে। রাকসুতে আমার চিন্তা ভাবনা থেকে কিছু করে যেতে পারবো, সেজন্যই নির্বাচনে দাঁড়ানো।
জাগো নিউজ: নির্বাচনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণা কী?
তাসিন খান: আমার কোনো সাংগঠনিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। আমার পরিবারেরও নানে। ছোটবেলা থেকেই সচেতন পরিবারে বেড়ে ওঠা। পরিবার থেকেই রাজনৈতিক সচেতনতার জায়গা তৈরি হয়েছিল। সেই সচেতনতা থেকেই জুলাই বিপ্লব ও রাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি।
আরও পড়ুন-
রাকসুর ব্যালটে শিক্ষার্থীরা প্রমাণ দেবে রাবিতে ছাত্রদলই শক্তিশালী
নীতি-আদর্শ-শৃঙ্খলা দেখে হিন্দু হয়েও শিবিরের প্যানেলে এসেছি
জাগো নিউজ: রাকসু নির্বাচনকে অরাজনৈতিক সংগঠন বলা হলেও রাজনৈতিক প্রভাব থেকেই যায়, সেক্ষেত্রে কী কৌশল অবলম্বন করবেন?
তাসিন খান: রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক যেটাই বলি, আসলে আমরা সবাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যাদের রাজনৈতিক সাপোর্ট আছে তাদের পরামর্শের জন্য মানুষ আছে বা তাদের বিশাল অঙ্কের টাকা আছে। আমরা সেদিক থেকে চাপ অনুভব করছি, কারণ আমাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো নিজেদেরকেই নিতে হচ্ছে। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে। প্যানেল গোছাতে গিয়ে আমাদের অনেক পরিশ্রম গেছে। আর টাকার যে বিষয়টা, আমরা এখানে ১০০% শারীরিক পরিশ্রম করবো।
জাগো নিউজ: সমন্বয়কদের অনেকে বিভিন্ন রাজনীতি দলের প্যানেলের মধ্যে ঢুকছে। সমন্বয়কদের মধ্যে কি তাহলে সমন্বয় সম্ভব হয়নি?
তাসিন খান: যখন আমরা জুলাই আন্দোলন করেছিলাম, তখন বিষয়টা ছিল ফ্যাসিবাদ দূর করার জন্য সবাই এক জায়গায় এসেছি। সকল মতাদর্শের মানুষজন একসঙ্গে ছিলাম। আমাদের সমন্বয় কমিটিতেও এটার ভিন্ন কিছু হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা এসেছিল। তারা জুলাইয়ের পর নিজ নিজ সংগঠনে ফিরে গেছে। যারা অবশিষ্ট ছিল তাদের কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না। তাদের মধ্যে রাকসু কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণে আমরা ভিন্ন ভিন্ন প্যানেলে গেছি। বিষয়টা এমন না যে আমাদের মতাদর্শের কোনো দ্বন্দ্ব হয়েছে যে বিভাজন হয়ে গেছি। রাকসুকে আমরা কখনো রাজনৈতিক মতাদর্শ মনে করি না। ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ে আসার একটি প্লাটফর্ম এটি। আমাদের সবার চিন্তা-ভাবনা ভিন্ন, যে কারণে সবার প্রচার-প্রচারণাও ভিন্ন। তার মানে এই নয় যে, আমাদের দ্বন্দ্ব আছে।
জাগো নিউজ: আপনাদের প্যানেল নিয়ে কেমন আশাবাদী?
তাসিন খান: আমার প্যানেলকে নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। আমার কাছে মনে হয় আমরা যেমনটা চেয়েছিলাম ঠিক তেমনভাবেই আমাদের প্যানেল সাজাতে পেরেছি। এ প্যানেলে বিভিন্ন সংগঠনের ও প্রথম সারির জুলাই যোদ্ধারা আছে। আমরা ভালো পদগুলোতে যোগ্য মানুষ নিতে পেরেছি। যদি আমরা ১০০% দিতে পারি আর যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, তাহলে আমাদের বিজয় সম্ভব।
জাগো নিউজ: নির্বাচনে কোনো শঙ্কার জায়গা আছে কি না?
তাসিন খান: সবথেকে বড় ঝুঁকি হচ্ছে নিরাপত্তা ইস্যু। আমরা দেখছি ছাত্র সংসদের নির্বাচন এমন ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে যেন ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের ম্যাচ চলছে। এটাকে একটা ক্ষমতার লড়াইয়ে পরিণত করা হচ্ছে। তার ফলে আমাদের নিরাপত্তার ইস্যু আরও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটা এমন না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা মেধাবী, তাদের নিজেদের প্রতিনিধিত্ব তারা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করবে। কারা তাদের ভালো করতে পারবে তাদেরকেই তারা নেতৃত্বে নিয়ে আসবে।
জাগো নিউজ: সময় দিয়ে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তাসিন খান: আপনাকেও ধন্যবাদ।
এফএ/এএসএম