বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে। এর পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন হয়েছে মোট তিনবার। এর মধ্যে দু’বার দলীয় প্যানেল ঘোষণা করে শিবির অংশ নিলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য পায়নি সংগঠনটি। কেন্দ্রীয় সংসদের কোনো পদে জয় না পেলেও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ কয়েকটি হলে জয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের।
এমন প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ তিন দশক পর নতুন ইতিহাস লেখার স্বপ্ন নিয়ে রাকসু নির্বাচনে আবারও অংশ নিচ্ছে শিবির। এবার তারা ঘোষণা করেছে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ নামের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বা ইনক্লুসিভ প্যানেল। এই প্যানেলে রাখা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক, আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী, সংখ্যালঘু প্রতিনিধি, নারী প্রার্থী এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির শিক্ষার্থীদের।
প্যানেল ঘোষণার তালিকায় সহসভাপতি (ভিপি) পদে রয়েছেন শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক রাবি শাখার সভাপতি এসএম সালমান সাব্বির।
প্যানেল ঘোষণার আগে পর্যন্ত সালমান সাব্বিরের শিবির-সংযুক্তি প্রকাশ্যে জানা যায়নি, যা অনেক শিক্ষার্থীর কাছে চমক হিসেবে এসেছে। এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো শিক্ষার্থী দ্বীপ মাহবুব এবং সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী সুজন চন্দ্রকে প্রার্থী করা হয়েছে। নারী প্রার্থী রয়েছেন মোট তিনজন— নির্ধারিত দুই নারী পদ ছাড়াও সহ-সমাজসেবা সম্পাদক পদে লড়বেন একজন নারী।
ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, শিবির যাত্রার শুরুতে দু’বার রাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, তবে জনপ্রিয়তা কম এবং কর্মীর সংখ্যা সীমিত থাকায় কেন্দ্রীয় কোনো পদে জয় পাওয়া সম্ভব হয়নি। যদিও শহীদ শামসুজ্জোহা হলে সব পদেই জয় পেয়েছিলাম। এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা বিশ্বাস করি, সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট এবারের নির্বাচনে সর্বোচ্চ সাফল্য নিয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কাউকে শুধু শিবির করার কারণে প্রার্থী করিনি। যোগ্যতা, দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণই আমাদের প্যানেলে জায়গা পাওয়ার মূল ভিত্তি। এটাই আমাদের ইনক্লুসিভিটির শক্তি।
প্যানেল ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, শিবির এবার অন্তত নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘু প্রার্থী রাখা ইতিবাচক উদ্যোগ। এতে বোঝা যায়, তারা ভিন্নধারার রাজনীতির কথা ভাবছে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত তাবাসসুম বলেন, শিবিরের ইমেজ অনেক শিক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এবারের বৈচিত্র্যময় প্যানেল হয়তো সেই ভাবমূর্তি বদলাতে সাহায্য করতে পারে।
ইতিহাস বিভাগের ছাত্র অনিন্দ্য রায় বলেন, দলীয় রাজনীতির বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা প্রশংসনীয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থান কতটা স্বাধীন থাকবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
শিক্ষার্থীদের এই ভিন্নমুখী প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই শিবির তাদের নতুন কৌশল নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামছে। সংগঠনটির নেতাদের প্রত্যাশা, এবার তাদের ইনক্লুসিভ প্যানেলই রাকসু নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দেবে।