সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৬ জন আন্দোলনকারীর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই মামলায় ওপেনিং স্টেটমেন্ট ও সাক্ষী গ্রহণের জন্য আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনাল-২-এর অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এ মামলায় মোট আসামি ১৬ জন। তাদের মধ্যে ৮ আসামি গ্রেপ্তার আছেন। বাকি আট আসামি পলাতক। গ্রেপ্তার আসামিদের আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
আসামিদের মধ্যে আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ আবজালুল হক ট্রাইব্যুনালে দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালকে আবজালুল হক মৌখিকভাবে জানান, তিনি দোষ স্বীকার করেন। একইসঙ্গে তিনি অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়ে পূর্ণাঙ্গ সত্য উন্মোচন করতে চান এবং ক্ষমা চান।
ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলেন, এই মামলার সব আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হলো। এর মধ্যে একজন আসামি আবজালুল হক অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন। আসামি জানিয়েছেন, তিনি অ্যাপ্রুভার হতে চান। ট্রাইব্যুনাল তাকে অনুমতি দিচ্ছেন অ্যাপ্রুভার হওয়ার বিষয়ে দুপুর ২টার মধ্যে আবেদন করার জন্য। এখন থেকে এই আসামির পুরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
গ্রেপ্তার অন্য সাত আসামি হলেন- সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন ও কামরুল হাসান, সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।
ট্রাইব্যুনাল আজ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনালে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। মামলার পলাতক আসামিদের মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
এর আগে সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ৬ মরদেহ পোড়ানো এবং ৪ আগস্ট একজনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউশনের শুনানি শেষ হয়। এরপর আসামিপক্ষের শুনানির জন্য ১৩ আগস্ট দিন ঠিক করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আসামিপক্ষের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন সকালে মামলার মোট ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার ৮ জনকে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
গত ২৮ জুলাই অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১৩ আগস্ট দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। এরই ধারাবাহিকতায় শুনানি হয়। এরও আগে ২ জুলাই এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির পর প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর লাশগুলো পুলিশভ্যানে রেখে আগুন ধরিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। যখন এসব মরদেহে আগুন দেওয়া হচ্ছিল, তখন একজনকে জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়।
এর আগের দিন ৪ আগস্ট একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মোট সাতজনকে হত্যা ও ছয়জনের মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে।
গত ২ জুলাই এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।
এফএইচ/এনএইচআর/এএসএম