রাজস্ব আয় ২৭০ কোটি টাকা কমলো ঢাকা দক্ষিণ সিটির

1 month ago 11

বিগত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে চার অর্থবছরেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) রাজস্ব আদায় ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসে বাড়ার পরিবর্তে উল্টো রাজস্ব আদায় কমেছে প্রায় ২৭০ কোটি টাকা।

এজন্য মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতায় টানা ৪০ দিন নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলনকে দায়ী করেছেন ডিএসসিসি প্রশাসক। ওই আন্দোলনের কারণে নগর ভবনসহ ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে সব ধরনের নাগরিক সেবা ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

বুধবার (৬ আগস্ট) ডিএসসিসির নগর ভবন মিলনায়তনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩ হাজার ৮৪১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন সংস্থাটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া। এবার বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এক হাজার ৩৯৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত পাঁচ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হোল্ডিং কর, বাজার সালামি, বাজার ভাড়া, ট্রেড লাইসেন্স, কোরবানির পশুর হাট ইজারাসহ ৫২টি খাত থেকে রাজস্ব আদায় করে ডিএসসিসি। এসব খাত থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৯১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ওই বছর আদায় হয় ৭০৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ হাজার ২৪২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আদায় ছিল ৮৭৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

রাজস্ব আয় ২৭০ কোটি টাকা কমলো ঢাকা দক্ষিণ সিটির

২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। তখন রাজস্ব আদায় হয় ১ হাজার ৩১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রাজস্ব আয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৭২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, আদায় ছিল ১ হাজার ৬১ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ৭৯১ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদায় থেকে ২০২৪-২৫ বছরের আদায় কম ২৬৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও আদায় ক্রমান্বয়ে বেড়েছে পরপর চার অর্থবছরে। কিন্তু সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আদায় বাড়ার পরিবর্তে কমেছে প্রায় ২৭০ কোটি টাকা। আদায়ের হারও কমে দাঁড়িয়েছে ৫৯ শতাংশে। বিগত দিনে যা ৭০ এর নিচে নামেনি।

ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের আদায় থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের আদায় বেশি ১৭৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের আদায় বেশি ১৫২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

একইভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের আদায় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আদায় বেশি ২৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আদায় থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আদায় কম ২৬৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, সাধারণত অর্থবছরের শেষ দিকে মে-জুনে রাজস্ব আদায় বেশি হয়। মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথগ্রহণের দাবিতে তার সমর্থকরা গত ১৪ মে আন্দোলন শুরু করেন। এর পরদিন, অর্থাৎ ১৫ মে থেকে নগর ভবনের প্রধান ফটকসহ আঞ্চলিক অফিসগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেন তার অনুসারীরা। ফলে স্থবির হয়ে পড়ে ডিএসসিসির নাগরিক সেবাসহ রাজস্ব আদায় কার্যক্রম। পরে সমালোচনার মুখে গত ২৩ জুন তালা খুলে দেন তারা। এর দুদিন পর প্রশাসকের দপ্তরের তালা খোলা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্দোলনের সময় দক্ষিণ সিটির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নগরভবনে ঢুকতে পারেননি। প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরেও তালা লাগানো ছিল। এ কারণেই ডিএসসিসি ৫২টি খাত থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। ওই সময় রাজস্ব দিতে অনেক নাগরিক করপোরেশনে এসে ফিরে গেছেন। ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু এবং নবায়ন কোনোটাই করা সম্ভব হয়নি। ফলে মূল বাজেটের রাজস্ব আয় কমে গেছে।’

সাধারণত বছরের শেষ দিকে জুন মাসে আমরা সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করি। কিন্তু ওই সময় টানা ৪০ দিন নগর ভবনে তালা ছিল। এ কারণে আমরা রাজস্ব আদায় করতে পারিনি।- ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া

বুধবার (৬ আগস্ট) বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আয় কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার কাছে জানতে চান জাগো নিউজের এই প্রতিবেদক। জবাবে প্রশাসক বলেন, ‘সাধারণত বছরের শেষ দিকে জুন মাসে আমরা সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করি। কিন্তু ওই সময় টানা ৪০ দিন নগর ভবনে তালা ছিল। এ কারণে আমরা রাজস্ব আদায় করতে পারিনি। কিন্তু আমরা টার্গেট করেছিলাম ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করবো। তবে গত অর্থবছরে যেসব বকেয়া রাজস্ব আছে, তা চলতি অর্থবছরে আদায় করা হবে।’

২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাস্তাঘাট সংস্কার ও উন্নয়নে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কিন্তু এ টাকার এক-তৃতীয়াংশও ডিএসসিসি খরচ করেনি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘যে কোনো কার্যক্রম আমরা বছরের শেষ করি জুন মাসে। কিন্তু ওই সময়ে নগর ভবনে তালা থাকায় আমরা তা করতে পারিনি। এখন আমরা সে কাজগুলো করতে পারবো।’

এ বিষয়ে জানতে ইশরাক হোসেনকে একাধিকবার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এর আগে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে বাতিল করা হয়। বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা করা হয়। ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ইশরাককে শপথ না পড়ানোয় ওই আন্দোলন শুরু হয়।

এমএমএ/এএসএ/এমএস

Read Entire Article