রান্না করা নয়, কাঁচা শাক-সবজি প্রিয় খাবার আনোয়ার সিরাজীর

5 hours ago 4

শাক-সবজি খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আর তা রান্না করে খাওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু তা যদি কাঁচা খাওয়া হয়, তাহলে বিষয়টা অবাক করার মতোই। ঠিক এমনই এক ব্যক্তির দেখা মিলেছে কিশোরগঞ্জে। যিনি রান্না করে খাওয়ার চাইতে কাঁচা খাওয়াতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই তো প্রতিদিনই তার খাদ্য তালিকায় থাকে বিভিন্ন ধরনের কাঁচা শাক-সবজি।

সিরাজ উদ্দীন মাস্টারের বড় সন্তান আনোয়ার সিরাজী (৫০) নামে ওই ব্যক্তির বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের পূর্ব হাত্রাপাড়া গ্রামে। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। পেশায় কৃষক। পরিবারে এক মেয়ে, প্রতিবন্ধী এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার।

জানা যায়, আনোয়ার সিরাজী ১০ বছর ধরে কাঁচা সব শাক-সবজি খেতে পছন্দ করেন। তার খাদ্য তালিকায় লাউ, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পালংশাক, চিচিঙ্গা, কপি, করলা, পালংশাক, পুঁইশাক, সিম, সরিষার ফুল, গাজর, টমেটো, মুলা, কাঁচামরিচ, পেঁপেসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। খেতে পারেন কাঁচা মাছ ও মাংস। ১০ বছর আগে মরণব্যাধি এক রোগে আক্রান্ত হলে বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দেন ডাক্তার ও পরিবারের সদস্যরা। তবে প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাক-সবজি খেলে হয় তো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারেন, ডাক্তারের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেয়ে প্রথমে রান্না করে খাওয়া শুরু করলেও একপর্যায়ে কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর থেকে সব খাবার কাঁচা খেয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সুস্থভাবে বেঁচে আছেন তিনি। আনোয়ার সিরাজী পেশায় একজন কৃষক। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে আসেন বাড়ির পেছনে ফসলি জমিতে। সেখান থেকে সবজি তুলে সকালের নাস্তা করেন। এরপর নেমে পড়েন জীবিকার তাগিদে। তবে অন্য সবাইকে এভাবে খাওয়া থেকে দূরে থাকতে বলেন তিনি।

আনোয়ার সিরাজী কালবেলাকে বলেন, আমার অসুস্থতা দেখে ডাক্তার আমাকে বলেছিল আমি ১০-১৫ দিন বেঁচে থাকব। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি এখনো বেঁচে আছি। আমাকে দেখে মানুষ ভয় পেত। ১০ বছর ধরে কাঁচা শাক-সবজি খেয়ে যাচ্ছি। দেশের এমন কোনো শাক-সবজি নেই যা আমি কাঁচা খেতে পারি না। কাঁচা শাক-সবজি না খেলে আমার শরীরে সমস্যা হয়। প্রথমে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী বাধা দিয়েছে। পরে তারা দেখল খেলে কোনো সমস্যা হয় না। তার জন্য আর নিষেধ করেনি।

তিনি বলেন, শাক-সবজি যত বেশি খাই আমার পেট ভালো থাকে। আমাকে ডাক্তার বলেছিল রান্না করে শাক-সবজি খাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি কাঁচা খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলেছি। প্রথমে দুই বছর শুধু পেঁপে ও বেল খেয়েছি। একটা সময় বেল না পেয়ে বেলের পাতা পেট ভরে খেয়েছি। আমি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রেশার সবসময় ৫০-৬০ থাকে। রক্তের সমস্যা থাকায় বেঁচে থাকার তাগিদে খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ডাক্তার না করেছে কিন্তু কাঁচা না খেলে ভালো লাগে না। এলাকাবাসী সবাই জানে। এখন যে অবস্থা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাঁচা শাক-সবজি খেয়ে যেতে হবে।

আনোয়ার সিরাজীর চাচা শাহাবুদ্দিন বলেন, এক সময় সে খুব অসুস্থ ছিল। এখন অনেকটাই সুস্থ আছে। কাঁচা শাক-সবজি সব খেতে পারে। এগুলো খেয়ে তার উপকার হয়েছে।

প্রতিবেশী আতাউর রহমান বলেন, আনোয়ার সিরাজী সব শাক-সবজি কাঁচা খেয়ে ফেলে। আমরা দেখেছি করলা, লাউ, ফুলকপি, পাতাকপি সব কাঁচা খেতে। তার শারীরিক কোনো ক্ষতি হতে দেখিনি। সে খেয়ে ভালোই আছে।

মো. সোহেল বলেন, মানুষ তো কত কিছুই খায়। কিন্তু সেগুলো রান্না করে। আনোয়ার ভাইয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন। এমন লোক আমি কখনো কোথাও দেখিনি। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম শরীরের ক্ষতি হয় কি না। তিনি বললেন, তার কোনো ক্ষতি হয় না। তার এমন কাণ্ডে আমরা আনন্দ পাই।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ আবিদুর রহমান ভূঞা বলেন, এমনভাবে কাঁচা শাক-সবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এতে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে রান্না করে খাবার খেলে খাদ্য গুণাগুণগুলো পাওয়া যায়। কাঁচা শাক-সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও ডিম থাকতে পারে। এ থেকে তিনি পরজীবিতে আক্রান্ত হতে পারেন।

তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, কাঁচা খাবার খাওয়ার কারণে কিডনি স্টোন হওয়া, লিভার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা ছিল। তবে এটি একটি মিরাকেল ঘটনা। মেডিকেল সায়েন্সে এটি সহজে ব্যাখ্যা করা কঠিন। তবে আনোয়ার সিরাজীর ক্ষেত্রে এমন ঘটনাকে মিরাকেল উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক।

Read Entire Article