রাষ্ট্র সংস্কারের আগে নিজেদের মানসিকতা সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি বলেন, আমাদের মানসিকতা সংস্কার আগে প্রয়োজন, তাহলেই আমাদের রাষ্ট্র সংস্কার কাজে দেবে। তা না হলে শুধু বই-পুস্তকেই অনেক সুন্দর সুন্দর কথা হবে। তাই আমাদের মানসিকতার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত জাতীয় সংলাপের প্রথম অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনব্যাপী এই জাতীয় সংলাপ ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, বাংলাদেশের অধিকার রক্ষায় যখন পাশ্ববর্তী একটি রাষ্ট্র থেকে ক্যাম্পেইন করে বাংলাদেশকে বিকৃতভাবে চিত্রিত করা হলো, তখন পুরো জাতি আবার দ্বিতীয়বারের মতো ঐক্যবদ্ধ হলো। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে উঠেছে, কিন্তু ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টাও চলছে। আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি কিন্তু নিজেই গণতান্ত্রিক হতে চাই না।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রসংস্কারের ক্ষেত্রে আমি কিতাবি কথায় যাচ্ছি না। আমি সোজা বাংলায় বলতে চাই, আমাদের মানসিকতা সংস্কার আগে প্রয়োজন। তাহলেই আমাদের রাষ্ট্র সংস্কার কাজে দেবে। তা না হলে শুধু বই-পুস্তকে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা হবে। বাংলাদেশে কিন্তু আইনের অভাব নেই, অভাব হচ্ছে আইনের প্রয়োগের। যারাই আইন তৈরি করে তারাই আইন মানতে চায় না। সুতরাং আমাদের মানসিকতার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
রাষ্ট্রদূতের মতে, ব্যক্তিগত স্বার্থরক্ষার বিষয়টা সবাইকে আগে পরিত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা আমাদের অধিকার। এটা সোনার থালায় কেউ উপঢৌকন হিসেবে দেয়নি। এটা আমাদের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে। সুতরাং এই রাষ্ট্রটি আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। এই কারণেই আমাদের সকলের প্রতি সহনশীল হতে হবে।
অনুষ্ঠান চলাকালে প্রয়াত বিএনপি নেতা এম তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন করতে হবে। যে আকাঙ্ক্ষা মানুষ ধারণ করেছে, মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা লুটপাট করে নিয়েছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার, সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন বাংলাদেশে হতে হবে।
তবে নির্বাচনের আগে বিগত সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করতে হবে বলে মনে করেন এই রাষ্ট্রদূত। তারপরই বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের আকাঙ্খার বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ড. জাহেদ উর রহমানের সঞ্চালনায় প্রথম অধিবেশনে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সংবিধান বিষয়ক সংস্কার কমিটির প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়েত ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ফজলুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
কেএইচ/এএমএ/এএসএম