রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি রাজনীতির সংস্কারও জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। একইসঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কার ও গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত অভ্যুত্থানের শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বলে অভিমত তার।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর লালবাগে সলিমুল্লাহ এতিমখানা সংলগ্ন এলাকায় থানা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত এক দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিপি নুর এ কথা বলেন। ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবে আহতদের সুস্থতা কামনা ও শহীদের স্মরণে দোয়া এবং ‘বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে রাষ্ট্র সংস্কার ও জনআকাঙ্ক্ষার রাজনীতি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
নুরুল হক নুর বলেন, জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এখনো স্বস্তির সুযোগ নেই। ফ্যাসিবাদীরা মাথাচাড়া দিতে চায়, বিভিন্ন জায়গায় চোরাগোপ্তা মিছিল করছে। ৫ আগষ্টের পূর্বে দল-মত নির্বিশেষে মানুষের মাঝে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তাতে এখন ফাটল ধরছে। অভ্যুত্থানের শক্তিসমূহ এখন বিভক্ত। গণঅভ্যুত্থানকারী শক্তিসমূহের বিভাজন ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। তাই রাষ্ট্র সংস্কার ও গণহত্যার বিচারে অভ্যুত্থানকারী শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি নিজেদের চিন্তা, সমাজ এবং রাজনীতির সংস্কারও জরুরি। ক্ষমতাকেন্দ্রিক যে দানবীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা পরিবর্তন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেন ক্ষমতায় গিয়ে দানব হয়ে উঠতে না পারে, তার সেজন্য আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং ৪ বছর মেয়াদি সংসদের কথা বলছি। দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনে তরুণদের নতুন রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে।
ভিপি নুর বলেন, খেটে খাওয়া মানুষরা রাষ্ট্র সংস্কার বুঝে না, তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চায়। পাঁচ থেকে সাড়ে ৫ কোটি নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের কথা ভাবতে হবে। এরাই গণআন্দোলনে অগ্রভাগে থাকে, জীবন দেয়। তাদের কথা মাথায় রাখতে হবে, বাজারে স্বস্তি ফেরাতে হবে। রাজনৈতিক দল ও জনগণের সাথে সরকারের দূরত্ব রাখা যাবে না। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই, তাদেরকেও সঠিক পথে থাকতে হবে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। কোনোভাবেই নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে গণঅভ্যুত্থান বেহাত হতে দেওয়া যাবে না। ’৭১-এর পরে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় ৫৩ বছরে দেশে কোনো শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ’২৪ সালেও ভুল করলে জাতি হিসেবে আমরা আর কখনো দাঁড়াতে পারব না। সুতরাং আসুন ক্ষমতার প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সকলে গণহত্যার বিচারে ঐক্যবদ্ধ থাকি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অপরাধীদের বিচারে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কিন্তু নিরীহ ও সাধারণ আওয়ামী লীগকে মামলায় ভুক্তভোগী করা যাবে না। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় হানাহানি-বিদ্বেষ বন্ধ করে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সারাদেশে পৌঁছে দিতে হবে।
রাশেদ খান বলেন, গণঅধিকার পরিষদ রাষ্ট্র সংস্কারে কাজ করছে। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড জনমনে বিভ্রান্ত তৈরি করছে। এগুলো থেকে সরকারকে দূরে থাকতে হবে। সকল দল ও গণঅভ্যুত্থানের স্টোকহোল্ডাদের নিয়ে সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলেই সরকারের প্রতি মানুষের সমর্থন বজায় থাকবে।
গণঅধিকার পরিষদ লালবাগ থানার সভাপতি ইউনূস আলীর সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিলের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন- গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম প্রমুখ।