প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে দেওয়া পরিপত্র সম্প্রতি অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। কোটা বহালের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পদক্ষেপ নিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী।
রোববার (৯ জুন) দুপুরে চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের পক্ষে ওই ছয় শিক্ষার্থী অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে এই স্মারকলিপি জমা দেন।
যদিও কোটা বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে দেওয়া স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আপনি অবগত আছেন, ২০১৮ সালে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারি চাকরি (নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড) থেকে কোটা পদ্ধতি বিলুপ্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে জাতীয় সংসদে কোটা বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি চাকরি থেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়।
আরও পড়ুন
এতে বলা হয়, কোটা সংস্কার ছিল শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীতদের প্রাণের দাবি। বৈষম্যমুক্ত ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণে চাকরিতে কোটা পদ্ধতির পুনর্বিবেচনা করে কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। সরকার সার্বিক বিবেচনায় নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডে কোটার বিলুপ্তিকে সমাধান মনে করেছিল। ২০১৮ সালের পরিপত্র জারি হওয়ার পর কোটামুক্তভাবে কয়েকটি সরকারি চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
‘কিন্তু ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেন। গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট হিসেবে রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে এই পরিপত্রকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেন। যার ফলে নবম থেক ত্রয়োদশ গ্রেডের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল হয়।’
আরও পড়ুন
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা মনে করি হাইকোর্টের রায়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। পুনরায় কোটা ফিরে আসা মানে দেশে লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রহসন। মুক্তিযুদ্ধের যে মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক করতে ও একটা দক্ষ প্রশাসন গড়তে মেধাভিত্তিক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
তারা বলেন, এ অবস্থায় সংবিধানে উল্লেখিত সুযোগের সমতার বিধান কার্যকর রাখতে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে অতি দ্রুত হাইকোর্টের এই আদেশ/জাজমেন্টকে স্থগিত (স্টে) চেয়ে আবেদন করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আপনার ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আপিল কার্যক্রমে সর্বাত্মক আইনগত প্রস্তুতি গ্রহণ করে এই রায়কে বাতিল করতে রাষ্ট্রপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করুক। অধিকন্তু, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ, চাকরিপ্রার্থী এবং আপামর জনতার পক্ষে কোটা পুনর্বহালের এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত সব পদক্ষেপ এবং সব পর্যায়ে আপনার সরাসরি অংশগ্রহণ আমাদের প্রাণের দাবি।
এফএইচ/ইএ/এএসএম