রিটকারী ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি, ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি শিক্ষকদের

3 hours ago 5

ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ফেসবুকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দেওয়ার ঘটনায় তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।

আলী হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, হাইকোর্টের বিপক্ষে এখন আন্দোলন না করে আগে একে গণধর্ষণের পদযাত্রা করা উচিত।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রিটের পর হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিলে, এর কিছু সময় পর আলী হোসেনের দেওয়া ওই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছ। ন্যাক্কারজনক এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী ও অনেকে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ওই ছাত্রী বামপন্থি কয়েকটি ছাত্রসংগঠন সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিন দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি রিট করার কারণ তুলে ধরেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, এস এম ফরহাদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থানে রয়েছেন। ফরহাদ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন পর্যন্ত ফরহাদের আনুষ্ঠানিক পদত্যাগের কোনো দলিলপত্র নির্বাচন কমিশনে দাখিল হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তার ভাষ্য, ফরহাদের এ ধরনের পটভূমি ও কার্যক্রম ডাকসুর গঠনতন্ত্রের সঙ্গে ‘সাংঘর্ষিক’।

ওই রিটকারী ছাত্রীকে হুমকি দেওয়া শিক্ষার্থী আলী হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

আলী হোসেনের এই পোস্টের প্রতিবাদে তারই বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ফেসবুকে লিখেছেন, আপনার অপছন্দ হলেও ফাহমিদার অধিকার আছে রিট করার। কিন্তু সেজন্য তাকে গণধর্ষনের হুমকি দেওয়ার অধিকার নাই আলী হোসেনের। তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হোক। তবে সেটাও হতে হবে ডিউ প্রসেসে। এটা ‘সুশীলগিরি’ হলে আমি সুশীল! লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার!

তিনি লেখেন, কোনো নারীর মতপ্রকাশের ধরন পছন্দ না হলেই তার ওপরে যে আক্রমণ শুরু হয় তার একটা অন্যতম অংশ আসে বট লীগ আর আল বটর বাহিনী থেকে। আর আসে আফসোস লীগ আর জাশি (জমায়াত-শিবির) থেকে। এরা মানুষকে নোংরা গালাগাল করতে এবং হুমকি দিতে ওস্তাদ। সকালে খাই লীগারদের থ্রেট আর সন্ধ্যায় জাশির। নিজের ছাত্রকে নিয়ে আর কী লিখবো। সে সুশীলগিরি দেখাতে না করেছে, সেই সুশীলগিরিই দেখালাম।

তিনি বলেন, সে (আলী হোসেন) বলেছে ফাহমিদাকে যে সাপোর্ট করবে তাদের জন্যও সে একই দাওয়াই প্রস্তাব করছে। যারা আলী হোসেনের মতামতে বিশ্বাস করেন এবং সমাজবিজ্ঞান পড়েও মনে করেন যে কোনো মানুষকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া যায়, অকারণে তারা আর আমার ক্লাসে বসার চেষ্টা করবেন না। আমি আপনাদের পড়াবো না।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন লিখেছেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হয়ে তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে গণধর্ষণের পদযাত্রার হুমকিকে হেট ক্রাইম বা ঘৃণাজনিত অপরাধ বলে। এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড একটি ফৌজদারি অপরাধ, যা ঘটে অপরাধীর পক্ষপাতমূলক মনোভাবের কারণে।

তিনি লেখেন, এইবার ভাবুন এই মানসিকতার মানুষেরা যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যায়, রাষ্ট্রকে তারা নারীর দোজখ বানিয়ে ফেলবে। পৃথিবীর যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ এমন হেট ক্রাইম করলে তার ছাত্রত্ব নিশ্চিতভাবে বাতিল হতো। পাশাপাশি কোর্টে বিচার হতো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হয় এখন দেখার বিষয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিইউয়র্কের বার্ড কলেজের শিক্ষক ফাহমিদুল হক প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, নামে বেনামে এরা এরকমই নারীবিদ্বেষী ও সহিংস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ভাবছে?

আলী হোসেনকে শিবিরের কর্মী বলেছেন অনেকে। যদিও এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য তার সঙ্গে মুঠোফোনসহ বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে মাহমুদ দিদার নামে একজন সিনেমা পরিচালক লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ঐতিহাসিক সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্র আলি হোসেন। ফাহমিদাকে গণধর্ষণের নিমিত্তে পদযাত্রার স্বপ্ন-বালক।

এর আগে সোমবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিট আবেদনকারী ছাত্রী বলেন, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মুক্তচিন্তার নেতৃত্ব গড়ে তোলা প্রয়োজন। তার ভাষায়, আমি চাই নির্বাচন হোক, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন প্রতিনিধিত্ব তৈরি হোক, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, নারীর প্রতি সম্মান দেখায়।

তিনি অভিযোগ করেন, ইসলামী ছাত্রশিবির অতীতে টিএসসিতে রাজাকারদের ছবি টাঙিয়ে তাদের জাতীয় বীর হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছিল। তিনি মনে করেন, সেই সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত একজন প্রার্থীর অংশগ্রহণ ডাকসুর আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জেপিআই/এএমএ

Read Entire Article