রেলের জমি দখল করে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ কর্তৃক অবৈধভাবে গড়ে তোলা ব্যক্তিগত পার্ক গুঁড়িয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) রেলওয়ের বিভাগীয় সহকারী ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পরিচালিত উচ্ছেদ দল পার্কটি গুঁড়িয়ে দেয়।
সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামানের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে রেলের প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে দৃষ্টিনন্দন বিনোদন পার্ক তৈরি করেছিলেন। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ভিন্ন নামে ২০টি প্রকল্পের মাধ্যমে দেড় কোটি টাকায় পার্কটি গড়ে তোলেন তিনি। পাশেই করা হয় আওয়ামী লীগ অফিস। সরকারি অর্থে গড়ে তোলা পার্কটি শুধু মন্ত্রীর ছেলে নিজস্ব অবকাশযাপনের জন্যই তৈরি করে। সাধারণ মানুষের জন্য ছিল প্রবেশ নিষেধ।
জানা গেছে, লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলরুটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পূর্ব পাশে উন্মুক্ত জায়গাটিতে এলাকার লোকজন অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করতেন। পাশে রেললাইনের পাশে অর্ধশত ভূমিহীন পরিবার বসবাস করছিল। দুই বছর আগে এসব দোকান ও বসতি উচ্ছেদ করে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ।
স্থানীয়রা জানান, ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তুষভাণ্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পাশের জায়গাটিতে এলাকার দরিদ্র লোকজন বসবাস করতেন। পাশে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করতেন। রাকিবুজ্জামান আহমেদ দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট উঠিয়ে দিয়ে জায়গাটি দখলে নিয়ে প্রথমে টিন দিয়ে ঘিরে ফেলেন। পরে জায়গাটির চারদিকে ইটের প্রাচীর দেওয়া হয়। মূল ফটকের ওপর বসান কংক্রিটের নৌকা। পাশে অবৈধভাবে তৈরি করেন আওয়ামী লীগ অফিস। এ ছাড়া ভেতরের অংশে একটি বড় পুকুর কেটে এর চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয় সড়ক। বসানো হয় চেয়ার-টেবিল। রাকিবুজ্জামান সেখানে মাঝেমধ্যে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন।
রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের শুরুতেই সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি এর তোয়াক্কা করেননি।
গত ৫ আগস্ট তীব্র গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নুরুজ্জামান আহমেদ, তার ছেলে রাকিবুজ্জামানসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য পলাতক। শুধু মন্ত্রীর এক ভাই সামছুজ্জামান আহমেদ ভুট্টু রংপুরে ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
জানতে চাইলে রেলওয়ের বিভাগীয় সহকারী ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষিজমির লাইসেন্স নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করে স্থাপনাগুলো তৈরি করেছিল। কয়েক দফায় তাদের চিঠি পাঠানো হলেও ক্ষমতার প্রভাবে তারা তোয়াক্কা করেনি। তবে পটপরিবর্তন হওয়ায় আমরা মন্ত্রীর ছেলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছি। অনেক গরিব মানুষ রেলের জমিতে বসবাস ও দোকানপাট করে আছে। তাদের প্রতি অন্যায় করে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। রেলওয়ের জায়গার ওপর গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাশের গোডাউন, আওয়ামী লীগ অফিস উচ্ছেদ করা হয়। এ উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উচ্ছেদ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী কমান্ড্যান্ট আতাউল গণি ওসমানীসহ রেল পুলিশ কর্মকর্তারা।