চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, আমাদের যা আছে, তা দিয়ে যদি চেষ্টা করি, তাও অনেক সেবা দেওয়া সম্ভব।
মঙ্গলবার (১৩ মে) চক্ষু চিকিৎসক সমিতির ৫২ তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
রাতকানা রোগ প্রতিরোধ টিকার প্রচলনের ইতিহাস বর্ণনা করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ১৯৮৪ সালে ফিল্ড ডিজিটে গিয়ে আমরা রাতকানা রোগের সন্ধান পাই। এরপর রাতকানা রোগের প্রতিরোধে ঠিকাদার ব্যবস্থা করা হয়। আমরা তো এখন চিকিৎসা দিচ্ছি কিন্তু প্রিভেনশনে (প্রতিরোধ) নজর নেই। চিকিৎসার পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট রোগ যাতে না হয় সেজন্য কাজ করা উচিত।
তিনি বলেন, চিকিৎসক কম, চিকিৎসক নেই এমনটা বলা হয়। অথচ এই চিকিৎসক তৈরির কাজটা তো আমাদের ছিল। অ্যানাটমি পড়ানোর চিকিৎসক নেই। আরও অনেক বিষয় পড়ানোরই চিকিৎসক নেই। কারণ এই বিষয়ের পেছনে ব্যবসা নেই। আমরা (সরকার) এটির সমাধানে কাজ করছি।
- আরও পড়ুন
- চিকিৎসাখাতের যেসব চ্যালেঞ্জের কথা জানালেন স্বাস্থ্যের ডিজি
- লক্ষাধিক টাকা সম্মানি ফিরিয়ে দিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
হাসপাতাল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আমি সারপ্রাইজ ভিজিটে একটা হাসপাতালে গেলাম। গিয়ে দেখি লেখা অনুসন্ধান কক্ষ, ভিতরে লোক নেই। বাচ্চা মেয়ে অসুস্থ মাকে নিয়ে ঘুরছে, ভর্তি কোথায় কীভাবে করবে, জানে না। রুমের সামনে জটলা অথচ ভিতরে চিকিৎসক নেই। পরিচালকের রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনার ইলেকট্রনিক হাজিরা পদ্ধতি সক্রিয় কি না? বলল যে সক্রিয়। তিনদিনের ইলেকট্রনিক হাজিরার ডেটা চেয়ে পাইনি। আমাদের যা আছে, তা দিয়ে যদি চেষ্টা করি, তাও অনেক সেবা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু আমরা কি নিজ নিজ সেবাটা দিতে পারছি?
ভালো চিকিৎসার জন্য সবাইকে আন্তরিক চেষ্টা করতে হবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আগের মতোই সব থেকে গেলে বা নিজেদের আন্তরিকতা ও একাগ্রতা না থাকলে হাজার বার সরকার পরিবর্তন করেও লাভ হবে না। আমাদের যেখানে চিকিৎসক নেই, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিব। তবে যাকে যেখানে দায়িত্ব দেই, পালন করতে বলি। যেখানে যেতে বলি, যেতে হবে। প্রয়োজনে বেতন বেশি দেবো।
চক্ষু চিকিৎসকদের প্রশংসা করে নূরজাহান বেগম বলেন, জুলাইয়ে আহত চক্ষু রোগীদের দেখতে বিভিন্ন দেশের চিকিৎসক এসেছেন। তারা আমাদের চিকিৎসকদের চিকিৎসাকে পারফেক্ট বলেছেন। আমি গর্ববোধ করেছি। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছি।
দেশে রোবোটিক ফিজিওথেরাপি চালু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোবোটিকস ফিজিওথেরাপির জন্য আমাদের প্রস্তাবে চীন ৭০টা রোবট দিয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সেটা স্থাপন করে শিগগির উদ্বোধন করা হবে। এজন্য আর দেশের বাইরে যেতে হবে না।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ৭১ শতাংশ পকেট মানি খরচ হয় এই সেক্টরে। প্রমোশনের টাকায় যদি ওষুধের দাম কমিয়ে দিতাম বা ইনস্ট্রুমেন্ট কেনায় কাজে লাগাতাম, তাহলে তো আমাদের ভালো হতো।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরই বলেছি, আমি যতদিন উপযুক্ত না হব, ফুল নেবো না। উদ্বোধন আমাকে দিয়ে নয়, কর্মে বা পেশায় যারা সেবা দিয়ে সফল, তাদের দিয়ে উদ্বোধন করান। তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের মতো হতে চাইবে। উপদেষ্টা বা মন্ত্রীর কী অর্জন আছে যে এই উদ্বোধন করবে?
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন বলেন, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের পদ খালি। এর অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে অন্যতম চিকিৎসকদের মধ্যে ক্যাডার, নন-ক্যাডারসহ নানা বিভাজন আছে। এগুলো মিনিমাইজ হওয়া দরকার। শূন্যপদ পূরণ ও চিকিৎসকদের পদোন্নতি নিয়ে কাজ করছে সরকার।
তিনি বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সারাদেশে মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণের কাজ হচ্ছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কিছু সরকারি অবকাঠামো ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চক্ষু চিকিৎসক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী, সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. জিন্নুরাইন (নিউটন) এবং সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপ কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. খন্দকার জিয়াউল ইসলাম মোহাম্মদ আলী।
অনুষ্ঠানে ২৪ এর জুলাই বিপ্লবে আহতদের নিয়ে বিশেষ প্রেজেন্টেশন দেন চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা। এ সময় বিভিন্ন পর্যায়ে অবদানের জন্য চিকিৎসকদের পুরস্কার দেওয়া হয়।
এসইউজে/এএমএ/জিকেএস