রোগীদের বরাদ্দের খাবার খাচ্ছে কে
মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের জন্য বরাদ্ধকৃত খাবারের অনিয়ম পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হাসপাতালে আগত রোগীদের দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের খাবার। এ ছাড়া মূল্য কারচুপির অভিযোগও রয়েছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে হাসপাতালে অভিযান এসব অনিয়মের তথ্য পায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোর শাখা।
জানা গেছে, সকালের নাশতায় বরাদ্দের অর্ধেকেরও কম পাউরুটি দেওয়া হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের। পর্যাপ্ত স্যালাইন মজুত থাকলেও বাইরে থেকে কিনতে হয় রোগীদের। মানসম্মত মশুরি ডাল (চিকন ১৪০ টাকা কেজি দরে) সরবরাহের কথা থাকলেও দেওয়া মোটা দানার (৮০ টাকা কেজি দর), মাছও দেওয়া হয় বরাদ্দের অর্ধেক, খাওয়ার অনুপযোগী নিম্নমানের চাল ও লবণ খাওয়ানো হয় রোগীদের। রোগীদের পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য যোগসাজসে বাইরে পাঠানো হয়।
অভিযোগ উঠেছে, আউট সোর্সিংয়ে নিয়োজিত হাবিবুল্লাহ বিলাহীকে দিয়ে রোগীদের কাটা-সেলাইয়ের কাজ করানো হয়।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় উপসহকারী পরিচালক চিরঞ্জীব নিয়োগী বলেন, সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি টিম ছদ্মবেশে সকাল থেকেই অভিযান চালায় হাসপাতালে। প্রথমে রোগী সেজে খুলনা যাওয়ার কথা বলে মোবাইল করা হয় অ্যাম্বুলেন্স চালক এখলাসের কাছে। তিনি রোগী বহনের সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করেই নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। তাকে সরকারি নিয়মের কথা বললে অ্যাম্বুলেন্স চালক সাফ জানিয়ে দেন, ‘ওসব সরকারি নিয়ম এখানে চলে না’।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও’র (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) উপস্থিতিতে রোগীদের জন্য কড়াইতে রান্নার কয়েকটি মাছের টুকরো পরিমাপ করা হয়। রোগীদের ১১৮ গ্রাম মাছের টুকরো বরাদ্দ থাকলেও পাওয়া গেছে ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম। পাউরুটি ১৫২ গ্রাম বরাদ্দের বিপরীতে দেওয়া হয় মাত্র ৫৬ গ্রাম।
রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরের ল্যাবে পাঠানো হয়। রোগী বাইরে নেওয়ার জন্য নয়ন হোসেন নামের এক দালালকে আটক করা হয়। তিনি নিজেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন একটি ডায়াগনস্টিকের ম্যানেজার বলে দাবি করেন।
এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের ডায়াগনস্টিকগুলোর বিরুদ্ধেও আছে অভিযোগ। হাসপাতালে এসব ডায়াগনস্টিকের দালালরা ঘোরাঘুরি করেন। তারা কৌশলে রোগীদের বাগিয়ে নেন। এসব ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে ভুল রিপোর্ট প্রদানের একাধিক অভিযোগও আছে।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন দুদকের ডিএডি তৌহিদুল ইসলাম ও এএসআই রমেচা খাতুন।
হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার ইসমাইল হোসেন জানান, ১২ বছর আগের মূল্য তালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ চলমান রয়েছে। যে কারণে খাবারের মান ঠিক রাখা যাচ্ছে না। মামলার ভয়ে খাবার সরবরাহ থেকে ছেড়ে আসতে পারছেন না বলে দাবি করেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফয়েজ আহমদ ফয়সল বলেন, বিষয়গুলো আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা জানান, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

3 hours ago
5









English (US) ·