রোগের কাছে হারতে চান না চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত চবির সুমন

1 month ago 8

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের মেধাবী শিক্ষার্থী সুমন আহমেদ। সুমনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুমন সবার ছোট। বাবা হাছেন আলী ও বড় ভাই আবু তাহের কৃষক। সুমনের স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি করবেন। পরিবারের হাল ধরে সংসারের অভাব-অনটন দূর করবেন এবং উন্নত চিকিৎসা করাবেন অসুস্থ বাবা-মায়ের।

সেই আশায় সরকারি চাকরির প্রস্তুতি ও নিজের খরচ বহনের জন্য অনুবাদকের চাকরি নেন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থার একটি নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বপ্নের কাছাকাছিও ছিলেন সুমন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে হঠাৎ করেই কিডনি জটিলতায় তার জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। তার শরীরে হঠাৎ বাসা বেঁধেছে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রোগ গ্লোমেরুলোনফ্রাইটিস।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সুমন ডিপার্টমেন্টেও ছিলেন দ্বিতীয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে টিউশনি আর সরকারি বৃত্তির টাকা দিয়ে নিজের খরচ বহন করতেন সুমন। জীবন যুদ্ধে সবসময় হাসিমুখে বিজয়ী হতে চেয়েছেন। কোথাও পিছিয়ে গেলেও হার মানেননি সহজে। তাই এই জীবন যুদ্ধেও সুমন পরাজিত হতে চান না। পূরণ করতে চান পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের কারিগর হয়ে ওঠার স্বপ্ন।

সুমন বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার একটি কিডনি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ছোট হয়ে গেছে। আরেকটি কিডনিও যেভাবে সমর্থন দেওয়ার কথা, সেই হারে সাড়া দিচ্ছে না। দৈনিক এক লিটারের বেশি পানি পান করায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন চিকিৎসক। খাবারও নিচ্ছেন সীমিত পরিমাণে। গত এক মাসে ওজন কমেছে প্রায় ২০ কেজি।

ডাক্তারের মতে, দেশে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে কিডনির বায়োপসি করালে জীবন নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া প্রয়োজন সুমনকে।

তবে বিপুল এই চিকিৎসা ব্যয় মেটানো তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। সুমনের মতো সংগ্রামী, মেধাবী ও স্বপ্নবাজ তরুণ আজ অসুখের কাছে অসহায়। তাই তিনি সকলের কাছে রোগমুক্তির জন্য দোয়া ও সহযোগিতা চান।

সুমনের বন্ধু রাহাত মাহমুদ খাঁন বলেন, এত সংগ্রাম করে জীবন কাটানোর পর বন্ধুদের কোথাও কেউ বিপদে পড়লে সুমন এগিয়ে আসত সবার আগেই। আজ সুমনকে দেখে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। তাকে দেখে ক্ষণিকের জন্য নিজেই অনুপ্রেরণা হারিয়ে ফেলতে বসেছি।

জানতে চাইলে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি রওশন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, সুমন আহমেদ অসুস্থ, এটা আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের বিভাগের অনেক শিক্ষক বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে। আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করবো।

দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, সুমন অনেক মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। আমরা চাই না এমন এক মেধাবী ঝরে পড়ুক। আপনারা যেটুকু পারেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

সোহেল রানা/এফএ/এমএস

Read Entire Article