রোজার শিক্ষা, যেন ভুলে না যাই ঈদে

1 day ago 9

এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদ মানেই আনন্দ, খুশি। তবে ঈদ সবার জন্য আনন্দ বয়ে আনে কি? ঈদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন মরিয়ম খানম সেতু

ঈদ যেন ভাইরাল হওয়ার প্রতিযোগিতা না হয়
তানজিনা আক্তার চৈতি
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান, চট্টগ্রাম কলেজ

ঈদ আনন্দের উৎসব, প্রতিযোগিতার নয়। বর্তমানে ঈদ যেন ভাইরাল হওয়ার নেশায় পরিণত হয়েছে। শপিং, সাজসজ্জা বা ঘুরতে যাওয়ার গল্প নিয়ে অতিরঞ্জিত পোস্ট, গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে নারীদের শপিং বাজেট নিয়ে মনগড়া তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া উদ্বেগজনক। এসব কথাবার্তা সাধারণ পরিবারের নারীদের মনে এক ধরনের হতাশা, হীনমন্যতা তৈরি করে এবং সামাজিক বৈষম্য বাড়ায়। অনেকেই অযথা প্রতিযোগিতায় নেমে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার হন। এই প্রবণতার ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য কষ্টকর হয়ে ওঠে। ঈদে প্রকৃত আনন্দ বিলাসিতায় নয়, বরং পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্যেই নিহিত। পোশাক বা গয়নার বাহুল্য দিয়ে নয়, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সৌহার্দ্যের মাধ্যমে ঈদের প্রকৃত আনন্দ খুঁজে নেওয়া উচিত। ঈদ হোক সবার জন্য সমান আনন্দময়।

বাবারা আর কতো ত্যাগ করবে!
উম্মে সালমা
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো ‘বাবা’। রোদ, ঝড়- বৃষ্টিতে নিজে ভিজে তবু ছাতা হয়ে আগলে রাখে পরিবারকে। ঈদ আনন্দে পুরো পরিবার মেতে উঠলেও বাবারা নিষ্পেষিত হয় দায়িত্বের ভারে। সবাইকে নতুন পোশাক দেওয়া, পরিবারের জন্য ঈদ বাজার, সবকিছু মিলিয়ে হিমশিম খায় সীমিত উপার্জনকারী বাবারা। বছরঘুরে একটা ঈদ আসে, তবে সে ঈদ মনে হয় বাবাদের জন্য আসে না। পরিবারের সবার জন্য ঈদ বাজেট বন্টন করার পর নিজের জন্য বরাদ্দ পায় কিঞ্চিৎ অংশ। সে অংশ দিয়েও তিনি নতুন পোশাক নেন না বরং পরিবারের জন্য ঈদ বাজার করেন। বাবাদেরকে আগলে রাখা প্রয়োজন। বাবার জন্য নতুন পোশাক উপহার দেওয়া যেতে পারে। এতে করে বাবা কেবল খুশিই হবেন না, তার অন্তর প্রশান্ত হবে, পরিবার থেকে এমন যত্ন পাওয়ায়। চলুন বাবাদের মুখে আমরা সন্তানরাই হাসি ফুটাই।

রোজার শিক্ষা, যেন ভুলে না যাই ঈদে
নুসরাত জাহান জেরিন
শিক্ষার্থী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইন কলেজ

ইসলামি জীবন বিধানে, সিয়াম সাধনার মাহে রমজানের পর আসে সাম্য সম্প্রীতির উৎসব, পবিত্র ঈদুল ফিতর। রোজা আমাদের মানবিক শিক্ষা দেয়। সারাদিন না খেয়ে থাকার মাধ্যমে আমরা ক্ষুধার্তদের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারি এবং তাদেরকে সাহায্য করার মনোভাব তৈরি হয়। ঈদের দিন এই শিক্ষাকে যেন ভুলে না যাই। এদিন প্রতিবেশী সহ অভাবীদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার বিতরণ করা প্রয়োজন। তাদের সঙ্গে সুন্দর ও মার্জিত আচরণ করা প্রয়োজন। মূলত এটাই ইসলামের শিক্ষা। এছাড়া ধনী-গরিব সবাই যেন আনন্দে ঈদ উদযাপন করতে পারে এ চেষ্টা থাকা দরকার। আর এজন্যই জাকাতের যথাযথ বন্টন মুসলমানদের জন্য ফরজ। সুষ্ঠু নিয়ম মেনে জাকাত আদায় করা উচিত, এতে ধনীর সম্পদ পবিত্র হয় এবং গরীবের অভাব দূর হয়। ইসলামের এই সুন্দর সামঞ্জস্যতা বাস্তবায়ন হলে তবেই রোজার প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হবে।

মধ্যবিত্তের ঈদ বাজারে টানাপোড়েন
সাইমা হাসান
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

ঈদ মানে আনন্দ, উৎসব ও নতুন পোশাক। তবে বর্তমানে পোশাকের আকাশছোঁয়া দামের কারণে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য ঈদের কেনাকাটা এক দুশ্চিন্তার বিষয়। গত বছরের তুলনায় এবার ঈদে পোশাকের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। বাজারে ব্র্যান্ডেড ও দেশীয় পোশাকের মূল্যবৃদ্ধি এতোটাই বেশি যে সাধ আর সাধ্যের গগনচুম্বী ফারাক। শপিং মল ও ব্র্যান্ড শো-রুমগুলো কৃত্রিম ছাড়ের ফাঁদ পাতছে-পুরোনো বা কম বিক্রিত পোশাকের ওপর বিভিন্ন ছাড় দেখিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করা হয়। সন্তানদের খুশি রাখতে গিয়ে বাবা-মায়েরা বাড়তি খরচের চাপে পড়েন, অনেকেই ঋণ করতে বাধ্য হোন। এসব বাড়তি চাপ ঈদ আনন্দ ম্লান করে দেয়। ব্যবসায়ীদের উচিত ন্যায্য মূল্য রাখা এবং ক্রেতাদেরও সচেতন থাকা প্রয়োজন। ভোগবাদী প্রতিযোগিতা নয়, ঈদের আনন্দ হোক সাধ্যের মধ্যে, সবার জন্য।

গৃহকর্মীরাও মানুষ, একটুখানি মানবতা প্রয়োজন
তৈয়বা খানম
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান, চট্টগ্রাম কলেজ

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর বছর ঘুরে আসে ঈদ আনন্দ। ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু এমন আনন্দঘন মুহূর্তে মলিন থাকে আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে রাঙাতে শ্রম দেওয়া সেই গৃহকর্মী, পিয়ন কিংবা দারোয়ানদের মুখগুলো। আমাদের আনন্দের ফোয়ারা বইলেও ঈদদ তাদের জন্য বিশেষ বার্তা নিয়ে আসে না। আমাদের স্বপ্নগুলো সাজাতে তাদের আনন্দগুলো বিক্রি করতে হয় স্বল্প টাকার কাছে। তারা সাহস করে ঈদ আনন্দের জন্য ছুটি চাইলে তাদের বেতন কর্তন কিংবা চাকরি হারানোর ভয় দেখায় অনেক মালিক। অথচ তারা চাইলেই তাদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারেন এই মানুষগুলোর সঙ্গে। একটা দিন তাদেরকে ছুটি দিতে পারেন অথবা তার পরিবারকে নতুন পোশাক ও ভালো খাবার দিয়ে খুশি করতে পারেন। আর নারী গৃহকর্মীদেরকে যদি কাজে আসতেই হয় তাহলে অন্তত এদিন তার ছোট্ট শিশুকেও সঙ্গে আনতে অনুমতি দিতে পারেন। এই বিশেষ দিনে, একজন মা’কে তার সন্তান থেকে দূরে না রাখলেও পারেন। মানবিক আচরণের চর্চা প্রয়োজন।

ঈদ বাজেটের কিছু অংশ সুবিধাবঞ্চিতদের হোক
কাজী মালিহা আকতার
শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

ঈদ মুসলমানের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন। তাই ঈদে কে না আনন্দ করতে চায়? কিন্তু বাস্তবে তা ঘটে না। আমরা নিজেদের আনন্দের গন্ডি পেরিয়ে যদি একটু চোখ রাখি আশেপাশের সুবিধাবঞ্চিতদের দিকে, দেখতে পাব তাদের চোখে আমাদের আনন্দ এক অষ্টম আশ্চর্যের মতো! কেননা তাদের সামর্থ্য নেই আমাদের মতো নতুন পোশাক ও দামী খাবার আয়োজন করা। মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত তাদেরও আনন্দের সুযোগ করে দেওয়া। ঈদ উপলক্ষে হয়তো অনেক বড় বড় বাজেট করি নিজেদের জন্য। সেখান থেকে সামান্য কিছু যদি আমরা সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য রাখতে পারি, তাদের কাছে হয়তো হয়ে উঠবো স্বপ্ন পূরণের দূত। আমরা অনেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে এবং ঈদের জন্য অনেকগুলো পোশাক কিনে অনেক অর্থ খরচ করি। অথচ সুবিধাবঞ্চিতদের কাছে সামান্য একটা জামা কেনাও স্বপ্ন। চলুন, আমরা তাদের স্বপ্ন পূরণ করি, ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে দেই সবার মাঝে।

কেএসকে/জেআইএম

Read Entire Article