ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
এক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপসহ দুই ডজন কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। ভোটের দিন ও তফসিলের তারিখ নির্ধারণ না করা হলেও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধ ভোট ধরে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রোডম্যাপ ঘোষণ করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
তফসিল কবে এবং ভোট কবে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ভোট গ্রহণের ৬০ দিন আগে তফসিল দেওয়া হবে। আমাদেরকে প্রধান উপদেষ্টার দফতর বলেছে- আগামী রমজানের আগে ভোট করার জন্য।আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি রমজান শুরু। আবার রমজান চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। এভাবে আপনি নির্বাচনের তারিখ বের করতে পারেন।
গণপরিষদ ও গণভোটের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা জাতীয় নির্বাচনের জন্য, সংসদ নির্বাচনের বাইরে আমাদের অন্য কোনো কিছু ভাবার সুযোগ নেই।
রোডম্যাপের মধ্যে সংলাপ, মত বিনিময়, মিটিং, ব্রিফিং, প্রশিক্ষণ, মুদ্রণ, বাজেট বরাদ্দ, আইটিভিত্তিক প্রস্তুতি, প্রচারণা, সমন্বয় সেল, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে যাবতীয় কর্মপরিকল্পনা মাথায় রেখে উল্লেখযোগ্য খাত ও বাস্তবায়নসূচিতে স্থান পেয়েছে।
আরও পড়ুন:
জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা
নির্বাচনে হেলিকপ্টার প্রয়োজন হলে জানাতে হবে তফসিলের ২ মাস আগে
কর্মপরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ যত বিষয়
অংশীজনের সংলাপ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচনী আইন বিধি সংস্কার, দল নিবন্ধন, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, পোস্টাল ভোটিং, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক অনুমোদন; নির্বাচনের জন্য জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নির্বাচনী দ্রব্যাদি সংগ্রহ, আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রম।
অন্যান্য আইনবিধি সংস্কার একীভূতকরণ; ম্যানুয়েল নির্দেশিকা পোস্টার পরিচয়পত্র মুদ্রণ; প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স উপযোগীকরণ, নির্বাচনী বাজেট বরাদ্দ, প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণ, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সুসংহতকরণ, ডিজিটাল মনিটর স্থাপন ও যন্ত্রপাতি সংযোজন, বেসরকারি প্রাথমিক ফলাফল প্রচার, ফলাফল প্রদর্শন, প্রকাশ ও প্রচার (বিভিন্ন মাধ্যমে); বিবিধ।
- দল ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ:
সেপ্টেম্বরে শেষ সপ্তাহে থেকে শুরু। শেষ হতে সময় লাগবে দেড় মাস।
- ভোটার তালিকা হালনাগাদ:
ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ধাপের সম্পূরক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যা চূড়ান্ত করা হবে ৩১ আগস্ট। আর ৩১ অক্টোবরের সম্পূরক তালিকা শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩০ নভেম্বর।
-নির্বাচনী আইনবিধি:
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), অন্যান্য আইন বিধি ৩১ আগস্টের মধ্যে সংশোধনের প্রস্তাব ও প্রণয়ন। এছাড়া সংসদী আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধন, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, সংসদ নির্বাচনের ভোটা কেন্দ্র নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা চূড়ান্ত, নির্বাচন পরিচালনা (সংশোধন) ২০২৫ প্রতীকসহ, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ এগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে যা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার আশা।
- রাজনৈতিক দল নিবন্ধন:
মধ্য সেপ্টেম্বর প্রাথমিক নিবন্ধন ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন।
সীমানা নির্ধারণ:
সেপ্টেম্বরের শুরুতে চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ আর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জিআইএস ম্যাপ প্রস্তুত ও প্রকাশ।
- পোস্টাল ভোটিং ও ব্যালট:
প্রকল্প অনুমোদন, সফটওয়্যার চূড়ান্ত, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, নিবন্ধন ও প্র্যাকিং মডিউল, প্রচারণা- অক্টোবরের সম্পন্ন। প্রবাসে নভেম্বরে ব্যালট পেপার পাঠানো। কারাবন্দিদের ভোটের দুই সপ্তাহ আগে পাঠানোর পরিকল্পনা।
- আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রম:
সেপ্টেম্বরে ও তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন এবং তফসিল ঘোষণার পর বৈঠক।
আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সংক্রান্ত চিঠিও দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন, ভোটের তারিখের প্রায় দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশন সভায় আলোচনা শেষে জানানো হয়, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দেবে ইসি।
তফসিলের আগে ও পরের কাজ থাকবে ও সম্ভাব্য বাস্তবায়ন সময় ধরে ইসির প্রস্তুতি চলে।
এমওএস/এনএইচআর/জেআইএম