ইতালি প্রতিনিধি
ইতালির রোমে গ্রাহক-এজেন্সির সাড়ে ৭ লাখ ইউরো (প্রায় ১২ কোটি টাকা) ফেরত না দিয়ে অফিস বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে। খোদ গ্রাহক ও এজেন্টরা এমন অভিযোগ করেছেন।
বাংলাদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গ্রাহকদের টাকা পুরোপুরি না দিয়ে হঠাৎ অফিস বন্ধ করে দেয় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী এক্সচেঞ্জ। এতে বিপাকে পড়েন গ্রাহক-এজেন্টরা।
জানা গেছে, এক্সচেঞ্জ অফিসটির অধীনে রোমসহ ইতালির বিভিন্ন শহরে ৯৩টি শাখা ছিল। গ্রাহকরা বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতেন। হুট করে এক্সচেঞ্জ বন্ধ করে দেওয়ায় তারা টাকা হাতে পাননি বলে একাধিক এজেন্টের মালিক বিপাকে পড়েন। এক্সচেঞ্জ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন এসব বাংলাদেশি।
এক্সচেঞ্জটির দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যারা এতদিন দায়িত্ব পালন করেছেন তারাই এখন দায়সারা কথা বলছেন। এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের আটকে থাকা টাকা ফেরত পেতে গত ২৬ আগস্ট রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে ভুক্তভোগীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
জানা যায়, তাদের এই কর্মসূচি পালনের ফলে সাময়িকভাবে ওইদিন দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে দূতাবাস কর্মকর্তারা উপস্থিত ভুক্তভোগী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে খোয়ানো অর্থ ফেরত পেতে একটি স্মারকলিপি দেন এবং দ্রুত সমাধানের অনুরোধ করেন প্রতিনিধি দল।
এ ব্যাপারে প্রায় ৬৫ হাজার ইউরো খোয়ানো ফিরেন্স (ফ্লোরেন্স) এজেন্টের আহসানুল হক পিয়াল বলেন, কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে আমাদের অনেক বড় বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী এক্সচেঞ্জ। আমরা অসহায় জীবনযাপন করছি। টাকা ফেরত পেতে রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বারস্থ হয়েছি।
তিনি বলেন, হঠাৎ এক্সচেঞ্জ বন্ধ করে দেওয়ায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছেআমাদের, তাই রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের শরণাপন্ন হয়েছি। দূতাবাস এ ব্যাপারে বাংলাদেশে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এক্সচেঞ্জের ট্রানজেকশন বন্ধ করে দেয়। সেই মাসেও ২০ হাজার ইউরো পাঠানো হয়।
আরেক ভুক্তভোগী মিলানো শাখার এজেন্ট শহীদুল আলম বলেন, তার প্রায় ২০ হাজার ইউরো ফেরত পাননি। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে বড় সমস্যায় আছেন।
তিনি বলেন, রোমে প্রধান শাখার দায়িত্বে থাকা হামিদ, ম্যানেজার ফরিদ আহমেদ ভূইয়া ও ঢাকার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এর কোনো সুরাহ পাইনি। আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও এখনো কেউ এর সঠিক ব্যবস্থা নেয়নি। আদৌ টাকা ফেরত পাবো কি না জানি না। আমরা কার কাছে যাবো? তাই দূতাবাস হতে পারে আমাদের সমাধানের ঠিকানা।
তিনি আরও বলেন, ২০১২ সাল থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী এক্সচেঞ্জ ইতালিতে কার্যক্রম চালু শুরু করে। দীর্ঘদিন কোনো সমস্যা হয়নি। হঠাৎ তারা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে আমাদের বিপদে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে রোম দূতাবাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রোমে অবস্থিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী এক্সচেঞ্জ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দূতাবাসে এসে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন গ্রাহক-এজেন্টরা। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। এরই মধ্যে ঢাকায় যোগাযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নিলে দূতাবাস ভুক্তভোগীদের জানাবে।
এমআরএম/বিএ/এএসএম